পরিকল্পিত এবং প্রতিক্রিয়াশীল নগর উন্নয়নে শহুরে জনবসতিগুলির ঝুঁকি এবং দুর্বলতার প্রোফাইলগুলির একটি ডাটাবেস তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডাটাবেসের মাধ্যমে দুর্বলতা ঝুঁকি মূল্যায়ন পরিচালনা করে জনবসতিপূর্ণ এলাকার জন্য সমস্ত ধরণের পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে।
শনিবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব উপস্থাপন করেন আরবান আইএনজিও ফোরাম।
বাংলাদেশের নগরে কাজ করা আন্তর্জাতিক এনজিওদের প্ল্যাটফর্ম আরবান আইএনজিও ফোরাম বাংলাদেশের নগরের জনগণের মৌলিক চাহিদা সহ বাসযোগ্যতা, স্থায়িত্বশীলতা এবং নগরবাসীর জীবন জীবিকা বিষয়ক ৩০ টি এজেন্ডাসহ ‘নগর ইশতেহার ২০২৩’ তুলে ধরা হয়।
আরবান এনজিও ফোরামের পক্ষ থেকে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন বলেন, গণপরিবহনের বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, সড়ক নিরাপত্তা, এবং সামাজিক সুরক্ষা নীতিগুলি প্রণয়ন করতে হবে। শহরগুলিতে পর্যাপ্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশ-বান্ধব হাঁটার পথ তৈরি এবং বজায় রাখা, পথচারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, সাইকেল ব্যবহারকে প্রচার করা, ডেডিকেটেড লেন নিশ্চিত করা এবং একটি ব্যাপক নন-মোটরাইজড গতিশীলতা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ইউনাইটেড পারপাস বাংলাদেশ-এর ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিটের ম্যানেজার মাহমুদ মিনার বলেন: স্থানীয় পর্যায়ে উন্নত সেবা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য একটি ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। মানসম্পন্ন জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনা করে সাশ্রয়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা প্রচার করতে এবং একটি স্মার্ট ও সক্ষম প্রজন্মের বিকাশকে উৎসাহিত করতে সাশ্রয়ী মূল্যের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা পরিষেবাগুলিকে উন্নত করে গর্ভবতী মহিলা, মা, নবজাতক এবং শিশুদের জন্য নির্ভরযোগ্য চেক-আপ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে একটি সহনশীল পরিবেশ সম্পর্কিত আইনগুলিকে জোরদার করতে হবে।
অক্সফাম বাংলাদেশ এর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং স্পেশালিস্ট দেবরাজ দে বলেন, আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিনোদনমূলক এলাকা, পোষা প্রাণী, সবুজ স্থান, শিক্ষাগত সুবিধা, অ-বাইনারি সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ স্থান এবং হাতিরঝিলের মতো ধানমণ্ডি লেক দিয়ে নৌ চলাচলের সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা প্রচার করতে এবং একটি স্মার্ট ও সক্ষম প্রজন্মের বিকাশকে উৎসাহিত করতে সাশ্রয়ী মূল্যের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
আরবান আইএনজিও ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে যাচ্ছে। এর ফলে শিল্পায়ন এবং নগরায়ন বৃদ্ধি পাবে। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের বেশ কিছু মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। এর ফলে বিকেন্দ্রীকৃত উন্নয়ন ধারা গতি পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আগামীতে উন্নয়নজনিত আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস পাবে।
এই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির জন্য আরবান আইএনজিও ফোরামের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ উন্নয়ন এজেন্ডা উপস্থাপন করা হল। বাংলাদেশের নগর কেন্দ্রিক উন্নয়নকে একটি সুষম ভিত্তি দেয়ার ক্ষেত্রে এই সকল এজেন্ডা বাস্তবায়ন ফলদায়ক হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বিন্যাসের সুবিধার্থে এজেন্ডাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো, নগরের জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা সম্পর্কিত এজেন্ডা, নগরের স্থায়িত্বশীলতা ও বাসযোগ্যতা বিষয়ক এজেন্ডা এবং নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থানসহ আয়-রোজগারের বিভিন্ন উপায় সৃষ্টির এজেন্ডা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল ওয়ান বাংলাদেশ এর হেড অফ এক্সটার্নাল রিলেশন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস মোসাম্মৎ তানজিনা আক্তার।