দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ২০২৩ (কপ ২৮) এক দিনের জন্য একটি বিশেষ হেলথ ডে (স্বাস্থ্য দিবস) উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুরোগসহ অন্যান্য ভেক্টর-বর্ণ ডিজিজসমূহ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। এই জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো দায় এড়াতে পারে না। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি কমিয়ে নিতে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে সহযোগিতার হাত আরো প্রসারিত করতে হবে, পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে সহোযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।
রবিবার সকালে প্রথমে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভেক্টর বর্ন রোগব্যাধিও বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বব্যাপী ডেংগু আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অন্যতম। মন্ত্রী তার বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে নানাবিধ তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদেরকে এই সমস্ত রোগসমূহ ম্যানেজ করতে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। হাসপাতালের বিছানা ডেঙ্গু রোগীদের দিয়ে ভর্তি থাকছে। যার ফলে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকায় অন্য রোগীরা স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এর উদ্যোগ ও সহায়তায় বাংলাদেশে জলবায়ু বান্ধব ভ্যাক্সিন প্ল্যান্ট স্থাপিত হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সাথে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মানে কার্যকরী পদক্ষেপ সহ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার আহবান জানান।
‘ওয়াকিং দ্য টক উইথ দ্য ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যাকশন’ শীর্ষক আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যসেবায় কী ধরনের ক্ষতি হয় এবং কীভাবে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা তুলে ধরেন।
পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন প্রোগ্রামে (৫ম সেক্টর প্ল্যান) নামে আরেকটি বৈঠকে অংশ নিয়ে জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি সকল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে স্মার্ট এবং জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহবান জানান।
বিকেলে স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ‘ক্লাইমেট হেলথ মিনিস্ট্রিয়াল’ শীর্ষক আরেকটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। সভায় উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশ তথা যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদেরকে কমিটমেন্ট অনুযায়ী সহযোগিতা করার আহবান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, এই সভায় প্রথমবারের মতো ‘হেলথ মিনিস্ট্রিয়াল ডিক্লারেশন’ গৃহীত হয়। বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে এই ডিক্লারেশনকে জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তিনটি সুপারিশের কথা বলেন, ১. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানানসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; ২. স্বাস্থ্যখাতে জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ খুজে বের করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে; এবং ৩. আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতার উপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট বক্তা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক পলিসিসমূহ এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে সৃষ্ট নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সকলের করণীয় কী কী তা উল্লেখ করে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
হেলথ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোর ভুয়সী প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে আরো সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের আশ্বাস দেন।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ ২৮ এর বিশেষ স্বাস্থ্য দিবসে বাংলাদেশর প্রতিনিধি দলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মো: মামুনুর রশিদসহ অন্যরা অংশগ্রহণ করেন।