সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে: মাথায় ব্যাগি গ্রিন। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে ফিলিপ হিউজ। মায়াবি চেহারার তরুণের চোখ ও ঠোটের কোনে আলতো হাসি। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এসসিজি) প্রেসবক্সের ডাইনিংয়ে পাশাপাশি তিনটি লকারে সেই হাসি ধরে রাখা হয়েছে পরম যত্নে। পরপারে অনেকটা সময় কাটানো হয়ে গেলেও হিউজ যেন আজও জীবন্ত এখানে!
হিউজ তার ঘাড় আরেকটু বাঁকা করলেই দেখতে পেতেন সুপার টুয়েলভের উদ্বোধনী ম্যাচ। যেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছে তার দল অস্ট্রেলিয়া। বেঁচে থাকলে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধি হয়ে এই টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রতিনিধিত্ব করতেন নিশ্চয়ই।
এসসিজির প্রেসবক্স ও ডাইনিং একদম লাগোয়া। প্রেসবক্সে চেয়ারের মাত্র চারটি সারি। তারপরও অর্ধেকটা ফাঁকা। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল খেললেও প্রেসবক্সের এমন দৃশ্য দেখে কিছুটা অবাক না হয়ে পারিনি। আইসিসি প্রতিনিধি সাসকিয়া টেলর জানালেন, ৬০ জন সাংবাদিক এই ম্যাচে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সংখ্যাটা খুব কম হলেও দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভদ্রমহিলাকে। বাংলাদেশে বিশ্বকাপ হলে আবেদন সংখ্যা ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়াতো নির্ঘাত। এখানকার ক্রিকেট ও মিডিয়া সংস্কৃতি পুরোপুরিই ভিন্ন।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ফাঁকে রাতের খাবার খেতে বসে চোখে পড়ল ১৯৩১ সালে এসসিজি কেমন ছিল সেই ছবি দেয়ালে লাগানো। গ্যালারি ভরা দর্শক। মাঠে ব্যাট করছেন স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। তারিখ ৩১ ডিসেম্বর।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই টেস্টে ১১২ রান করেছিলেন ব্র্যাডম্যান। ইনিংস ও ১৫৫ রানে জিতেছিল অজিরা। ব্র্যাডম্যানের নামেই করা হয়েছে এসসিজি’র এই স্ট্যান্ড। আর প্রেসবক্স রিচি বেনোর নামে।
ঐতিহাসিক এই ভেন্যুটি আরও একটি কারণে স্মৃতিময়। আর সেটি হলো হিউজের অকাল মৃত্যু। বলের আঘাতে এই মাঠের ২২ গজেই লুটিয়ে পড়েছিলেন। ২০১৪ সালে শেফিল শিল্ডের ম্যাচে স্বদেশের পেসার শন অ্যাবোটের এক বাউন্সারে সবকিছু ওলট-পালট। ২৫ বছরের টগবগে তরুণের জীবনের চাকাই থমকে গেল। এসসিজি’তে এই ঘটনার হেলমেটের সুরক্ষা নীতিই বদলে গেছে।
পাশাপাশি তিনটি লকার। ভেতরে ব্যাট। ব্যাটের হাতলের অংশে হিউজের সেই হাসিমাখা ছবিটি। জন্ম ও মৃত্যু সালের নিচেই লেখা ‘৬৩ নট আউট’। ব্যাটের সুইটপার্টে লেখা-দ্য বয় ফ্রম ম্যাকসভিলে।
বলের আঘাতে যখন আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হিউজ তখন ৬৩ রানে অপরাজিত। হাসপাতাল থেকে আর মাঠে ফেরা হয়নি তার। ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় আজীবন অপরাজিত থেকে যাবে ইনিংসটি। এমসিজির প্রেসবক্সেও এই ছবিও হয়ত থেকে যাবে চিরদিন।
আইসিসি মিডিয়া ম্যানেজারের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে দেয়ালে থাকা হিউজকে ক্যামেরাবন্দী করার দৃশ্যটি টেবিলে বসে খেতে খেতে খেয়াল করছিলেন অ্যাডাম গ্রিলক্রিস্ট। লকারের কাছে এসে হিউজের দিকে অনেকক্ষণ তাকালেন। গিলির মনের ভেতর তখন কী চলছিল সেটি জানা যায়নি আইসিসির মিডিয়া বিভাগ থেকে কিছু বিধি-নিষেধ থাকায়।
হিউজ ও গিলক্রিস্টের মধ্যে বড় একটি মিল রয়েছে। দুজনই নিউ সাউথ ওয়েলসের এবং তারা খুব অল্পবয়সে নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরেছিলেন। ১২ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে খেলতেন এবং পারফরম্যান্সে তাদের ছাড়িয়েও যেতেন হিউজ। গিলক্রিস্ট ১৫ বছর বয়সে একটি স্পোর্টস প্রোগামের মাধ্যমে উঠে এসেছিলেন।
সিডনির গ্রাম ম্যাকসভিলে থেকে উঠে এসেছিলেন হিউজ। সেখান থেকে গিলক্রিস্টের বাড়িতে যেতে এক ঘণ্টার ড্রাইভ। কৌশরে বিস্ময় জাগিয়ে সিডনিতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী চরিত্র তারা দুজনই।