চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জীবনটা গানের সাথেই কাটাবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি: বিবাগী লিমন

বাংলা গানের ভুবনে নতুন তারার উঁকি

বাংলা গানের ভুবনে উঁকি দিচ্ছে নতুন এক তারকা। ইউটিউব রেকমেন্ডেশন থেকে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া অনন্য সুরেলা একটি কণ্ঠ জায়গা করে নিয়েছে ভক্তদের প্রতিদিনকার প্লে-লিস্টে। সংগীতপ্রেমীদের ভালোবাসা ও সমর্থনে দিনকে দিন শ্রোতাদর্শকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিচ্ছেন তিনি!

বলছি জাকির হোসেন লিমনের কথা। যিনি তার ইউটিউব চ্যানেল ও ভক্তদের কাছে বিবাগী লিমন নামেই বেশি পরিচিত। শিল্পী হিসেবে খুবই সংগীত-সচেতন। সম্প্রতি তার কণ্ঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর বিখ্যাত ‘পদ্মার ঢেউ রে’ গান দিয়ে ‘আইপিডিসি আমাদের গান’-এর চতুর্থ সিজন শুরু হলো। তার সম্পর্কে ভক্তদের মনে জন্ম নেওয়া প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই সাক্ষাৎকারে।

 

নাম দিয়েই শুরু করা যাক, লিমন কেন বিবাগী?
আসলে আমার বয়স যখন ৯, তখন থেকেই আমি বাড়ির বাইরে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আমার বাড়ি। আমার ছোট মামা থাকতেন গোবিন্দগঞ্জ। পড়াশোনার জন্য আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ছোট মামার কাছে। বাড়ি ছেড়ে সেই বের হওয়া, আজও ফেরা হয় নি। বড় হওয়ার পর একসময় মনে হলো সেই ছোটবেলা থেকে আমি ঘর ছাড়া, বিবাগী। তারপর সেটাই জুড়ে নিলাম নামের সাথে।

গানের সাথে পরিচয়, কখন, কীভাবে?
তাও ছোটবেলা থেকেই, যখন আমি তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। তখন তো ক্যাসেট প্লেয়ারের সময়, ফোন ছিল না। তবে বাড়িতে টিভি ছিল, বিটিভিতে গান শোনা হতো। বিশেষ করে যখন শুক্রবারে বাংলা সিনেমা হতো, সিনেমার গানগুলো খুব ভালো লাগত। তাছাড়া, আমার মেজ খালু ছিলেন একজন মৌলানা। খালুর সুবাদে পরিচয় হয় ইসলামী সংগীতের সাথে যেটাকে আমরা গজল হিসেবে চিনি। উনার কাছে গজলের বেশ ভালো সংগ্রহ ছিল। সেই থেকেই শুরু।

সচেতনভাবে গানের প্রেমে পড়লেন কখন?
গান যে একটা সাধনার বিষয় সেটা তখনও বুঝা হয়ে উঠে নি। দেখা যেত, কোন গান মনে ধরে গেলে সেই গানটা তিন থেকে চার বার শুনলেই সেটার সুর আমি গলায় তুলে নিতে পারতাম, এমনকি গানের কথাগুলোও আমার মুখস্থ হয়ে যেত। যেটা এখনও হয়। এভাবে গান শুনতে শুনতে নির্দিষ্ট কিছু গান মনে বিশেষ জায়গা নিতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে গানে মজতে শুরু করি।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখার চর্চা?
যখন ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে গোবিন্দগঞ্জে কিছু গানের স্কুল হয়। যেমন, তুলি আর্ট স্কুল, অগ্নিবীণা। এসব স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ্য করতাম। গান শেখানো হচ্ছে, একসাথে অনেক বাচ্চারা সা-রে-গা-মা চর্চা করছে। তখন ইচ্ছে হতো, আমিও গান শিখি। তখনই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখার বিষয়টা মাথায় আসে। বাড়িতে জানালাম, তবে সম্মতি পাওয়া গেলো না। তখনকার সময়ে আমার স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার গানের একটা ক্লাস হতো। সেই ক্লাসের আমি নিয়মিত ছাত্র ছিলাম। গানের গলা ভালো হওয়ায় স্কুলের জাতীয় সংগীত পাঠের দায়িত্বটা আমি পাই।

সম্পর্কের গভীরতা…

জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানান উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের গানের সাথে আমার পরিচয় হতে থাকল। যেখানেই যেতাম, নতুন কিছু না কিছু পেয়ে যেতাম। বাংলা আধুনিক গান, সিনেমার গান, ব্যান্ড সংগীত, ভারতীয় আধুনিক বাংলা গান, বিশ্ব সংগীত- সময়ের সাথে সাথে গানের বিভিন্ন ঘরানার সাথে পরিচয় হতে থাকে আর গানের প্রতি ভালোবাসাও বাড়তে থাকে। একটা পর্যায়ে সুযোগ হলো বাউল সংগীতের সাথে পরিচিত হওয়ার। আর তারপর থেকেই নতুন করে জীবনের মানে খোঁজা শুরু। গানের আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ। আসলে আস্তে আস্তে আমি গানের জগতের গভীরে প্রবেশ করতে থাকলাম এবং সেটা হচ্ছিল একেবারে স্বাভাবিক গতিতে, প্রাকৃতিকভাবে। একেবারেই পরিকল্পিত কিছু না। আমার বড় হওয়ার সাথে সাথে গানের সাথে গভীরতাও বাড়তে থাকল।

গানটা কি শুধুই নেশা, নাকি পেশা হিসেবেও ভাবছেন?
আসলে আমি বরাবরই মনের আনন্দে গান করেছি, একাবারে নিজের জন্য। ধীরে ধীরে কখন যে গানে হারিয়ে গিয়েছি, সেটা নিজেও বুঝতে পারি নি। গান করা যে পেশা হতে পারে তাও জানা ছিল না। জীবন চলার পথে কখনও গান আমার সঙ্গী হয়েছে, আবার কখনও আমি সঙ্গী হয়েছি গানের। আমার জীবনে গান ছাড়া সময় নেই বললেই চলে। এখন মনে হয়, গানটা নেশা হলেও জগৎ-সংসারে টিকে থাকার তাগিদে অর্থযোগের জন্য পেশার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। আমার গানের সংসারটা টিকিয়ে রাখার রসদ যোগাতে এখন আয়ের কথাও ভাবতে হয়।

গায়ক না হলে কী হতেন, এরকম ভাবনা এসেছে কখনও?
তখন গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারের খুব সংকট ছিল। আমার পরিবারের চাওয়া ছিল, বড় হয়ে ডাক্তার হই। গান না হলে হয়তো পরিবারের ইচ্ছায় ডাক্তারি পেশার দিকেই ছোটা হতো।

আপনার কণ্ঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর বিখ্যাত গান ‘পদ্মার ঢেউ রে’ দিয়ে সম্প্রতি শুরু হলো ‘আইপিডিসি আমাদের গান’-এর চতুর্থ সিজন। একই দিনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন আর বিবাগীর কণ্ঠে ‘পদ্মার ঢেউ রে’- পরিকল্পিত না কি কাকতালীয়?
গানের প্রস্তুতির শুরুর দিকে এটা আসলে আমার মাথায় ছিল না। গানটা যখন রিলিজ করার প্রস্তুতি চলছিল, ব্যাপারটা শুরুতে আমার কাছে কিছুটা কাকতালীয় মনে হলেও পড়ে জেনেছি এটা পরিকল্পিত। মূলত পদ্মার উদ্বোধন উদযাপন করার লক্ষ্যেই গান নির্বাচনে ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ দলের এই মুন্সিয়ানা। গানটার নতুন রূপও দেওয়া হয়েছে ওভাবে, নতুন এক বিজয়ের আনন্দ আর উদযাপনের সুরে। যে পদ্মার ঢেউ একসময় পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবনে আতংক আর দুঃখের কারণ ছিল, সেই পদ্মার বুকে গড়ে উঠা সেতু এই মানুষগুলোর জীবনে এনে দিয়েছে নতুন এক আনন্দের ঢেউ।

গানে পাতা সংসারের ভবিষ্যৎ ছবিটা কেমন আঁকলেন?
জীবনটা গানের সাথেই কাটাবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই যখনই সুযোগ পাই গানের সাথে দিন কাটানোর সন্ধি করি। এই যেমন এখন চেষ্টায় আছি ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার, যাতে করে সামনের কটা বছর নিশ্চিন্তে গানের জগতে ডুবে থাকা যায়। আমার কাছে গান গাওয়ার আগে গানের কথার মর্ম বোঝাটাই বেশি অর্থবহ। বিশেষ করে বাউল সংগীতে একটা গানের কথা সাধারণ কোন কথা নয়, এর ভেতর লুকিয়ে থাকে জীবনের মানে। আমি সেই মানে খোঁজার পেছনেই ছুটতে চাই। আমি গান জানতে চাই, গান বুঝতে চাই আর গানের সেই অর্থ নিজের জীবনে, অন্তরে ধারণ করতে চাই। তাই এখন গান নিয়ে গবেষণার দিকে মনোনিবেশ করছি।