
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি আগামী বছর দেশে বড় জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিল। গত দুই মাস ধরে সংগঠনটি আইটি সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান অর্জন, বোমা তৈরী কৌশল জানা এবং সংগঠন পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানার পর সংগঠনটির শীর্ষ নেতা মো.জুয়েল মোল্লাসহ (২৯) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। অন্য দু’জন হলেন মো.রাহুল হোসেন (২১) ও মো. গাজিউল ইসলাম (৪০)।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট হেড কোয়ার্টারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউয়ের ডিআইজি (অপারেশন্স) মোহা. আলীম মাহমুদ।
তিনি বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে জুয়েলকে বাগেরহাট থেকে, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে গাজীউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে জুয়েল এই সংগঠনের প্রধান। বাকি দুই জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি ২-৩ মাস তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানি, যিনি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন, তারা বক্তব্যে মূলত উদ্বুদ্ধ হন জুয়েল। এর ফলে তিনি নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করে। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। জসীম উদ্দিন রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের।
সংগঠনটির অর্থের যোগানদাতা কারা এবং সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০-৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে তা এখনো জানা যায়নি।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০২৪ সালে বড় একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেই জন্য তারা অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহসহ বোমা বানানোর চেষ্টা করছিল। তবে তাদের হামলার টার্গেট কি তা এখনও জানা যায়নি, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানার চেষ্টা করব।
এটিইউ ডিআইজি বলেন, ইতোমধ্যে তারা নতুন উগ্রবাদী সংগঠন এবং ’সাহেবে-কিরান বারাহ (দারুল জান্নাত)’ নামে সিক্রেট অনলাইন গ্রুপ ব্যবহার করে অসংখ্য সদস্য সংগ্রহ করেছে।
তাদের কেউ কেউ নিষিদ্ধ ঘোষিত ’আনসার আল ইসলাম’ বা ’আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের’ অনুসারী হলেও নতুন সংগঠন গঠন করে নিজস্ব পরিকল্পনায় নিজেদের মত করে দেশব্যাপী সশস্ত্র হামলা পরিচালনার পরিকল্পনা করে আসছিল। ইতোমধ্যে অসংখ্য যুবক এ সংগঠনের সদস্য পদ নিয়ে দলে যোগ দিয়েছে। এন্টি টেররিজম ইউনিট তাদের নামের তালিকা করে গ্রেপ্তার করবে।
সংবাদ সম্মেলনে এটিইউয়ের পুলিশ সুপার (অপারেশনস্) ছানোয়ার হোসেন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করে। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় একটি বেকারি কর্মী ছিলেন। আর বাকি গ্রেপ্তার দুই জন হিজবুত তাওহীদের সদস্য ছিলেন।
এটিইউ জানায়, সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি মো. জুয়েল মোল্লার কাছ থেকে উদ্ধার হয় নব সৃষ্ট সংগঠনটির আটটি পতাকা। সে আগেও উগ্রবাদী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে ছিল। মো. রাহুল হোসেন (২১) নতুন জঙ্গি সংগঠনের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি। সে প্রচার-প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ ও বোমা ও অস্ত্র সম্পর্কিত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। মো. গাজীউল ইসলাম (৪০) তথাকথিত উগ্রবাদী সংগঠনের জন্য অর্থ ও সদস্য সংগ্রহরে জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।