টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে আবারও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে । রাজধানী ঢাকায় এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তুরাগ থানায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ মার্চ ) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার বলেন: ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে তুরাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।
ওসি আরো জানান, শুক্রবার (২৯ মার্চ) মধ্যরাতে ৯৯৯ এ কল দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক কলেজছাত্রী। এরপর তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে গত দুই মাস আগে বড় মনিরের সাথে তার পরিচয় হয় । গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারে তাদের প্রথম দেখা হয়।
পরে, গতকাল রাতে আবারও রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে ভুক্তভোগীকে তুরাগ থানার প্রিয়াঙ্কা সিটিতে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যান বড় মনির। সেখানেই তাকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী বলেন, তিনি আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন। আমি বারবার তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি যাতে আমার কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করে দেন। তবুও রেহাই মেলেনি।
ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ট্রিপল নাইনে কল করলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে। এরইমধ্যে ওই বাসার সিসি ক্যামেরাও জব্দ করা হয়েছে।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার বলেন: গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের নামে অভিযোগ এসেছে। আসামি শনাক্ত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ যে করবে, সে যেই হোক তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই।
আগের একটি ধর্ষণের মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বড় মনির। গত বছরের ৫ এপ্রিল এক কিশোরীর করা ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
টাঙ্গাইলের ওই মামলার নথি থেকে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে মামলার বাদী ওই কিশোরী বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কিশোরীকে যেতে বলেন।
কিশোরীর অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’ করেন বড় মনির। ঘটনা প্রকাশ করলে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দেন তিনি।
প্রথমবার ‘ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ বড় মনি পরে আরও কয়েকবার ‘ধর্ষণ করেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন ওই কিশোরী।
মামলায় তিনি বলেছেন, ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
তাতে রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির ওই কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে যান’ এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন।
পরে মেয়েটির একটি সন্তান হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনির। বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য যান বড় মনির। তখন আদালত বড় মনির ও সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে।
গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে দাখিল করা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা বড় মনির নন।
নবজাতকের ডিএনএর সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএ মেলেনি বলে পিবিআইর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পক্ষে থাকায় গত বছরের ৯ অক্টোবর বড় মনিরকে জামিন দেয় আপিল বিভাগ।
এর প্রায় দেড় মাস পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর ওই ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।