ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নতুন প্রজন্মকে অনুধাবন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন: ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রেখেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে দীর্ঘ ২২ বছরের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরেছিলেন। এ ভাষণের মাধ্যমে তিনি নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রস্তুত করেছিলেন।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন ঢাবি উপাচার্য।
এসময় বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি হিসেবে বর্ণনা করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন: ‘৭ মার্চের ভাষণ হলো তার অমর কাব্যমালার অনন্য নিদর্শন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুধু ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকেই অনুপ্রাণিত করেছিল তা নয়, বরং এই ভাষণ যুগে যুগে বিশ্বের সকল অবহেলিত, বঞ্চিত ও স্বাধীনতাকামী জাতি-গোষ্ঠীকে অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকবে। এ কারণেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন: মুক্তিযুদ্ধের বিষয় নিয়ে যতটা সম্ভব বিতর্কমুক্ত থাকতে পারবো ততটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। স্বাধীনতার যে মূল দর্শন রয়েছে, এখনও আমরা তা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। স্বাধীনতার যে সার্ব মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার যে স্বপ্ন জাতির জনক দেখেছিলেন যে বাঙালিরা হাসবে, বাঙালিরা খেলবে, বাঙালিরা পেট ভরে খাবে কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এমন মানুষ রয়েছে যারা খোলা ছাদের নিচে বাস করে, না খেয়ে দিন পার করে। তাই তার সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায় থেকে কিভাবে এই জাতিকে মুক্ত করবো তা নিয়ে ভাবতে হবে।
বিশেষ সমাবর্তনে বঙ্গবন্ধুকে ডিগ্রি প্রদানের পূর্বে পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের ডিগ্রি বাতিললের আহ্বান জানিয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন: যুগে যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, আল্লামা ইকবাল, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ অনেককেই সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত করেছে। একইভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েম হওয়ার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় চরিত্রকে সরকারি চরিত্রে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বিশেষ সমাবর্তনে জাতির পিতাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়ার আগে পাকিস্তানের শোষক গোষ্ঠীর সামরিক শাসক ইস্কান্দার মির্জা, খাজা নাজিমুদ্দিন ও আইয়ুব খানসহ বাংলা বিরোধী, ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতাকারী সামরিক শাসকদের ডি-লিট ডিগ্রি বাতিল করা যায় কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ।
এছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতি, কারিগরী কর্মচারী সমিতি ও ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান।