চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান।
বাংলাদেশকে এ বিপ্লবের সুবিধা ভোগ করতে এখনই প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের সুযোগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ডিসিসিআই ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন (বিডিফোরআইআর) যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আবুল কাসেম খান বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে রোবোটিকস, ক্লাউড টেকনোলোজি, ব্লকচেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং, ন্যানোটেকনোলজি এবং বায়োটেকনোলজি এই জাতীয় বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে। এসব প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে, তরুণ প্রজন্মকে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাই এ বিষয় নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রণোদনা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের সুযোগও সৃষ্টি হবে এবং তা মোকাবেলার জন্য এখনই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে আমাদের তরুণ সমাজ ইতোমধ্যে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যারা নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবে, তারাই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে এবং এমতাবস্থায় অবশ্যই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিফোরআইআরের সহ-সভাপতি সৈয়দ তামজিদ উর রহমান। এতে তিনি বলেন, আমরা এখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এ শিল্প বিপ্লবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, নতুন কর্মদক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রবন্ধে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতানুগতিক প্রক্রিয়া পরিহার করে ক্রেতা বান্ধব কার্যক্রম গ্রহণ এবং নতুন ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য শিল্পমালিকদের আহবান জানানো হয়। এছাড়া নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মেলানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিল্প ও শিক্ষার সমন্বয় আরো বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়।
এতে আরো বলা হয়, এ শিল্প বিপ্লবের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবিত হবে এবং উৎপাদন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কারণে পণ্যের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের দাম কমবে, যার মাধ্যমে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের পলিসি এ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে একদিকে যেমন নতুন কাজের দিগন্ত উন্মোচিত হবে একইসাথে কর্মচ্যুতিরও সম্ভাবনা থাকবে। এজন্য আগামী ২০ বছরের মধ্যে দেশের কর্মক্ষম প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে এবং আরো ২ কোটি মানুষকে নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে।
তিনি বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং নতুন উদ্ভাবিত তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করার আহ্বান জানান।