১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করতে পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনক্সায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা চালানো হয়। পাকিস্তানি শাসকচক্র বুঝে গিয়েছিল বাংলাদেশ চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অাঙ্গুলের নির্দেশে। কোনভাবেই মুক্তিকামী বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তাই রাতের অন্ধকারে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে চালানো হয় এই নৃশংস গণহত্যা।
নিরস্ত্র মানুষের ওপর এমন হত্যাযজ্ঞ বিশ্বের নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে বিপুল জয় পেলে পাকিস্তানি জান্তা সরকার বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে, মূলত ক্ষমতা দিতে শাসকশ্রেণী রাজি ছিল না। মার্চের এক তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। এখবর ঢাকায় পৌঁছালে জনতা রাজপথে নেমে আসে। এ ঘোষণার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল ও ৩ মার্চ সারদেশে হরতালের ডাক দেন। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন। ২ মার্চ রাতে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ ভেঙ্গে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সে রাতে পাক সেনারা ৮ জন বাঙালিকে হত্যা করে। ৩ মার্চ পল্টনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্সে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দিলেন এক ঐতিহাসিক ভাষণ। সংগ্রামের পূর্বাপর ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ভাষণে ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা বলে নির্দেশ দেন শত্রুর মোকাবেলা করার। অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে এবং ১৫ মার্চ তিনি ৩৫ দফা নির্দেশনা দেন। বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমত অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শাসক গোষ্ঠীর কয়েকদফা ব্যর্থ বৈঠক হয়। তলে তলে সুকৌশলে বৈঠকের নামে সামরিক জান্তা ঢাকায় সৈন্য ও সমরাস্ত্র আনা শুরু করেন। সময়ক্ষেপণ করে অপারেশন সার্চ লাইটের পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়।
২৫ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিন। দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। এদিন সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টার যোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে। দুপুরের পর বঙ্গবন্ধু কর্মীদের যার যার এলাকায় চলে যাবার নির্দেশ দেন। ২৪ তারিখই পশ্চিম পাকিস্তানের গণপরিষদ সদস্যরা ঢাকা ত্যাগ করে। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চোখ ফাকিঁ দিতে পারেননি। তিনি ঠিকই জেনে যান যে প্রেসিডেন্ট ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তার বৈঠকে কোনো ইতিবাচক ফলাফল না পেয়ে বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান সমস্যা সমাধানের জন্য সামরিক ব্যবস্থা বেছে নিলেন আর এখানেই পাকিস্তানের সমাপ্তি হলো।’ বঙ্গবন্ধু সবাইকে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য তৈরি হওয়ার আহবান জানান।
অপারেশন সার্চলাইট অভিযান শুরুর সময় নির্ধারিত ছিল ২৬ মার্চ রাত ১টা। কিন্তু সে রাতেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিকামী বাঙালি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও এ.এ.কে নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালেক মন্তব্য করেছেন যে, বাঙালি বিদ্রোহীদের প্রবল প্রতিরোধ সৃষ্টির আগেই পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছার লক্ষ্যে অভিযান এগিয়ে ২৫ মার্চ রাত ১১.৩০ মিনিটে শুরু করে। পাকিস্তান সৈন্যরা ১১.৩০ মিনিটে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে ফার্মগেটে মিছিলরত বাঙালিদের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের সূচনা ঘটায়। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক একযোগে পিলখানা, রাজারবাগে আক্রমণ চালায়। রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, জগন্নাথ হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন শিক্ষকসহ বহু ছাত্রকে হত্যা করে।
একই পরিকল্পনার আওতায় পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও, ইন্দিরা রোড, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, গণকটুলী, ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান প্রভৃতি স্থানে আক্রমণ চালায়। এ রাতে চট্টগ্রামে পাক সেনাদের গুলিতে অনেকে হতাহত হয়। মার্চ মাসের মধ্যেই অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনায় সেনানিবাসকে কেন্দ্র করে পাকবাহিনী তাণ্ডব চালায়। এ ছাড়া বাঙালির মুক্তির আন্দোলনে সমর্থনের কারণে ইত্তেফাক, সংবাদ ও দি পিপলস অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। বহু সংবাদকর্মী আগুনে পুড়ে মারা যান।
২৫ শে মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল ও জহুরুল হক হলসহ সারা ঢাকা শহরে তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এক রাতের মধ্যেই তারা ঢাকা শহরকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলে। একদিনে এত মানুষ একসাথে হত্যা বিশ্বে নজিরবিহীন।
আর্চার ব্লাডের লেখা “দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ” থেকে জানা যায়, সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে আগুন ধরানো হয়েছিল এবং ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হবার সময় মেশিন গান দিয়ে গুলি করে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। ২৬ মার্চ সকালের দিকে সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুম ও ৮৮ ইউনিটের মধ্যে যে কথোপকথন হয় তার রেকর্ড থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অগণিত ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়েছিল।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নূরুল্লার ধারণকৃত ভিডিওটি আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশবিকতার সাক্ষী। সেই ভিডিওরত দেখতে পাওয়া যায়, ছাত্রদের দিয়েই জগন্নাথ হলের মাঠে গর্ত খোঁড়া হচ্ছে, সেই গর্তে ছাত্রদের লাশ মাটিচাপা দেয়া হচ্ছে। অনেক ঘরবাড়ি ও পত্রিকা অফিস, প্রেসক্লাবে আগুন ধরিয়ে কামান ও মর্টার হামলা চালিয়ে বিধ্বস্ত করা হয়। আগুন দেয়া হয় শাঁখারিপট্টি ও তাঁতিবাজারের অসংখ্য ঘর-বাড়িতে। ঢাকার অলিগলিতে বহু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সর্ম্পকে লিখেছেন, ‘সে রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার হলো আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট, আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’
এ গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা ও সামগ্রিক সঙ্কট নিয়ে পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক প্রকাশিত শ্বেতপত্র যা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়: ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
এ কালরাত্রিতে ঢাকায় নিহতের সংখ্যা সিডনির ‘মর্নিং হেরাল্ড’ লিখেছে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ। আর ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে ১০ হাজার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকার ‘সেন্ট লুইস পোস্টে’ যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাৎসিদের গণহত্যার পর এই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সবচেয়ে নৃশংস। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এর প্রতিনিধি সিডনি শ্যানবার্গকে ৩০ জুন (১৯৭১) ঢাকা থেকে বহিষ্কার করা হয়। নয়াদিল্লি গিয়ে তিনি ঢাকার কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে বলেছেন, প্রথম তিন মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে।
সাইমন ড্রিং ৩১ মার্চ লন্ডনের ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর ঢাকা মহানগরী মুহুর্মুহু তোপধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে। সর্বত্র বোমা-বারুদের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। টিক্কা খান বর্বর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নির্মমভাবে গণবিদ্রোহ দমনে সচেষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের প্রধান কার্যালয় পিলখানা সেনা-অভিযানে বিধ্বস্ত হয়। নিরস্ত্র মানুষের ওপর সেনাবাহিনী নির্বিচারে ভারী আর.আর.গান, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যবহার করে। ইকবাল হলকে তারা প্রধান আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। সেখানে প্রথম ধাক্কাতেই ২০০ ছাত্র নিহত হয়। একদিকে হলগুলোর দিকে উপর্যপুরি শেল নিক্ষেপ করা হতে থাকে, অন্যদিকে চলতে থাকে মেশিনগানের গুলি। দুদিন পর্যন্ত পোড়া ঘরগুলোর জানালা-দরজায় মৃতদেহ ঝুঁলে থাকতে দেখা যায়। পথে-ঘাটে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। জগন্নাথ হলেও বর্বরোচিত আক্রমণ চালানো হয়। কয়েকশত ছাত্র, যারা প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী, নিহত-আহত হয়। সৈন্যরা মৃতদেহগুলোকে গর্ত খুড়ে গণকবর দেয়। এরপর ট্যাংক চালিয়ে মাটি সমান করে। রিপোর্টের এক অংশে বলা হয়: ‘আল্লাহ ও পাকিস্তানের ঐক্যের নামে ঢাকা আজ এক বিধ্বস্ত ও সন্ত্রস্ত নগরী।’
‘Sydney Morning Herald’ প্রকাশ করে যে, ঢাকার মাটিতে একমাত্র ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তান বাহিনীর হাতে এক লাখ মানুষ নিহত হয়। হত্যাকাণ্ড শুরুর প্রথম তিন দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া ও অন্যান্য শহরে লক্ষ লক্ষ নর-নারী ও শিশু প্রাণ হারায়। ঢাকার প্রায় ১০ লাখ ভয়ার্ত মানুষ গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টির সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে থেকে অভিযান প্রত্যক্ষ করেন। পরদিন ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে ভূট্টো সেনাবাহিনীর পূর্ব রাতের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে মন্তব্য করেন, ‘আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে পাকিস্তানকে রক্ষা করা গেছে।’ ইয়াহিয়া খানসহ সামরিক কর্মকর্তাদের সকলে অভিযানের প্রশংসা করেন। এমনকি পরবর্তী ৫ আগস্ট পাকিস্তান সরকার যে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করে তাতে ২৫ মার্চ সামরিক অভিযানকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে এই গণহত্যা চালানো হয়।
১১ মার্চ ১০ম জাতীয় সংসদের ১৩তম অধিবেশনে ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক’ মর্মে প্রস্তাবটি সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় সংসদে উত্থাপন করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গণহত্যা সংক্রান্ত বিশেষ ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র প্রদর্শন করেন এবং বিরোধী দলীয় নেতাসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী এই প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়ে ৭ ঘন্টাব্যাপী আলোচনায় অংশ নেন। সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ শে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের প্রস্তাব পাস হয়। এরপর ২০ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। পরদিন ২১ মার্চ জারি হওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে পালনের অনুমোদন দেয়া হয়।
জাতীয় সংসদ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। কারণ বিশ্ববাসী এই গণহত্যার ব্যাপারে আরো বিস্তৃত ও ব্যাপকভাবে অবগত হতে পারবে; পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং ন্যাক্কারজনক নৃশংসতার সাক্ষ্য হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্বাশত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সাথে সাথে জাতির দায়বদ্ধতার ঘানি খানিকটা লাঘব হবে। বাঙালির ইতিহাস কত সংগ্রাম, রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে নির্মিত এবং লাখো মানুষের রক্তত্যাগ, বিসর্জন ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, তা নুতন প্রজন্ম জানতে পারবে। যারা এদেশে এখনও পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাসী তাদের বুঝতে হবে ইতিহাস কখনও বিকৃত করা যায় না, শহীদের আত্মত্যাগকে অপমান করার অধিকার তাদের নেই। এইসব স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানি প্রেমীদের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণাকে জাগ্রত করবে। পরাজিত শক্তির দোসররা আর বির্তক সৃষ্টি করতে পারবে না। আমাদের ত্যাগ ও রক্তঝরা ইতিহাসে যারা কলংক সৃষ্টি করেছে, আজও যারা ইতিহাসকে অস্বীকার করতে চায় তাদের মিথ্যাচারের পথে হাঁটা বন্ধ হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এ অনন্য দৃষ্টান্তমূলক ঐতিহাসিক মাইলফলক সৃষ্টির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আজকের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)