দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তাশো এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানের করাচির রোশান এন্টারপ্রাইজ থেকে ৩শ’ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করবে।
তাশো এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সেলিমুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির আদেশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বিকল্প দেশ খুঁজছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজের আমদানি উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে পাকিস্তানের ট্রেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব পাকিস্তানের (টিডিএপি) একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের তাসো এন্টারপ্রাইজ পাকিস্তানের করাচি ভিত্তিক রোশান এন্টারপ্রাইজ এর সাথে পেঁয়াজ আমদানির একটি চুক্তি সই করেছে। বাংলাদেশে কমপক্ষে ১২ কন্টেইনার পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। প্রতি কনটেইনারে কমপক্ষে ২৮ টন পেঁয়াজ ধরে।
এ বিষয়ে তাশো এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সেলিমুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, হ্যাঁ, আমরা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ এসে পৌঁছবে বাংলাদেশে। আমি ছাড়াও শ্যামবাজারের কয়েকজন আমদানিকারকও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে।
তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে জানিয়ে এই পেঁয়াজ আমদানিকারক বলেন, আমরা যখন প্রথম অর্ডার দিয়েছিলাম পাকিস্তানে, তখন দাম কম ছিল। প্রথমে প্রতি টন ৪২০ ডলার করে বুকিং দিয়েছি। এর কয়েকদিন পর মানভেদে তা ৫শ’ ডলারের উঠে গেছে। তারপর এখন ৬শ ডলারে বুকিং দিতে হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রীলংকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এই সভাপতি বলেন, আমার তাশো এন্টারপ্রাইজ ইতোমধ্যে ৭/৮ কন্টেইনার শিপমেন্ট করেছে। সেগুলো পথে আছে। তবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ সরাসরি কোনো জাহাজ নেই। জাহাজগুলো শ্রীলংকার কলম্বো হয়ে বাংলাদেশে আসে। তাই সময় বেশি লাগে। ২০-২৫ দিন লেগে যায়। কিন্তু পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসলে ১০/১২ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছতো বলে জানান তিনি।
পাকিস্তান ছাড়াও মিশর থেকে তার পেঁয়াজ আসছে বলেও জানান এই পেঁয়াজ আমদানিকারক।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ প্রতি বছরে ৭ লাখ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। যার ৭৫ শতাংশই আমদানি করে ভারত থেকে। কিন্তু ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশ পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
ঢাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা টাকা রাখা হচ্ছে। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশে এটিই পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম। এমতাবস্থায় তুরস্ক, মিয়ানমার ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে বাংলাদেশের ব্যবসায়িরা। নতুন বাজারের সন্ধানে পাকিস্তানি পেঁয়াজও দেশে আসছে শীঘ্রই।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানের রপ্তানিকারকরাও একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’ পত্রিকার প্রতিবেদনে অল পাকিস্তান ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবলস এক্সপোটার্স অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ওয়াহিদ আহমেদ বলেন, প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য প্রায় ৬শ’ ডলার। বর্তমানে ১২ কন্টেইনার পেঁয়াজ রপ্তানি হচ্ছে, প্রতি কন্টেইনারে প্রায় ২৮ টন পেঁয়াজ ধরে। পেঁয়াজ ছাড়াও বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে খেজুর, গ্রে ফেব্রিক এবং সুতা আমদানির চিন্তা করছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য থমকে ছিল। দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক সভা শেষবারের মতো হয়েছিল ২০০৫ সালে।