চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হোয়াইট হাউজে প্রবেশের আগেই বিতর্ক-সমালোচনায় টালমাটাল ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুরু থেকেই বিতর্ক। যাকে নিয়ে বিতর্কের শুরু আঘাত-প্রত্যাঘাতের তিক্ততা আর কুৎসিত প্রচারণার পর শেষ পর্যন্ত সেই ডােনাল্ট ট্রাম্পই নির্বাচিত হন। নির্বাচনী উত্তাপের সেই আচ ক্ষমতার পালাবদলের সময়ও অব্যাহত। যা নিয়ে পুরো টালমাতাল মার্কিন রাজনীতি থেকে বিশ্ব রাজনীতি। এই টালমাতালের সাগরে মার্কিন অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে আছে বৈশ্বিক অনুসঙ্গও।

নির্বাচনের আগে থেকেই যেমন ভাষায় কথা বলে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ডােনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন রাজনীতির অঙ্গন সেই ভাষা বা প্রতিক্রিয়ার সাথে খুব একটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু ট্রাম্পের জয়ের পর মার্কিন উদারপন্থীরাও ক্রমবর্ধমানভাবে ট্রাম্পের কায়দায় প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করেছেন।

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার ১০ দিন আগে বিদায়ী ভাষণে গণতন্ত্র, একতা, বৈষম্যহীনতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন ওবামা। নির্বাচনের আগে থেকেই উত্তরসূরি হিসেবে ট্রাম্পের মতো কাউকে যে চাননি এবং টাম্পের জয় যে তাকে মার্কিন গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় রাখল, সে কথা অনেক জনগণের মতো ওবামা নিজে গোপন করেননি। তাই ট্রাম্পের নাম না করলেও প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের দীর্ঘ বক্তৃতার প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল গণতন্ত্রের বিপদের কথা।

তা সে অর্থনৈতিক বিভেদই হোক বা সামাজিক বৈষম্য। জাতি-বর্ণভিত্তিক বিদ্বেষই হোক বা অভিবাসী-শরণার্থীদের প্রতি বিতৃষ্ণা। ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতাই হোক বা কট্টরবাদের রমরমা ভাব।

ওবামার আশঙ্কাগুলো যে অমূলক নয়, বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প নিজে ফের প্রমাণ করেছেন। অভিবাসন ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল যে তুলবেনই এবং ওবামার চালু করা স্বাস্থ্যবিমা যে বাতিল করবেনই, সেটা জোর গলাতেই ঘোষণা করেছেন। এছাড়া ট্রাম্পের দাবি, কর্মসংস্থান তৈরির জন্য ঈশ্বরের সেরা সৃষ্টি তিনিই। বলেছেন, ইশ্বরের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করবেন তিনি।

ট্রাম্প আতঙ্কের ফল পাওয়া গেছে হাতেনাতেই। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্যের ২০ মিনিটের মধ্যে ওষুধ কোম্পানির চরম লোকসান হয়। মাত্র ২০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ৯টি ওষুধ কোম্পানি পুঁজিবাজারের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সেক্টরের মূলধনে ২ হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলারের লোকসান গুণে।

ট্রাম্প টাওয়ারের পেন্টহাউজে বসে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরা

ট্রাম্পের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। ক্ষোভ ঝেড়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক সিএনএনের উপরে।

দিন কয়েক আগে এক প্রতিবন্ধী সাংবাদিককে কটাক্ষ করায় ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ৷ সঙ্গে সঙ্গেই টুইটারে তার জবাব দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, অস্কারজয়ী মেরিল স্ট্রিপ নাকি ‘অন্যতম সেরা ওভার রেটেড অভিনেত্রী’৷ ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন আরেক নামজাদা হলিউট অভিনেতা জর্জ ক্রুনিও।

মার্কিন গোয়েন্দাদের সাথেও ট্রাম্পের সম্পর্ক আদায়-কাঁ চকলা। এই রকম সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের প্রশাসন চালাতে গিয়ে ট্রাম্প বিপদেই পড়বেন বলে অনুমান বিশ্লেষকদের।

য়েন্দারা প্রচার মাধ্যমে তার গোপন তথ্য ফাঁস করেছে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন গোয়েন্দা প্রধান জেমস ক্ল্যাপার।

তবে গোয়েন্দা প্রধান ক্ল্যাপার অসমর্থিত তথ্য প্রচারের নিন্দা জানাতে তাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন, রাশিয়ার কাছে ট্রাম্প বিষয়ে স্পর্শকাতর ও মানহানিকর তথ্যগুলোর বিশ্বস্ততা নিয়ে গোয়েন্দারা কোনো মত দেননি।

বিদায়ী আর আসন্ন প্রেসিডেন্টের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা এবার তুমুল আকার নিয়েছে। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ। ওবামার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটি-সহ বিভিন্ন স‌ংগঠনের সার্ভারে রুশ হ্যাকিংয়ের অভিযোগ নিয়ে হইচই হয়েছে আগেই। এখন সংবাদমাধ্যমের দাবি, সিআইএ-সহ চারটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ওবামা এবং ট্রাম্পের কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন, ট্রাম্প সম্পর্কে গোপনতম তথ্যও হাতিয়ে নিয়েছে ক্রেমলিনের গুপ্তচররা।

যদিও এই অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ধনকুবেরের জবাব, কিছু ‘অসুস্থ’ লোক ‘মনগড়া’ খবর তৈরি করছে। তবে হ্যাকিংয়ের কথাটা মেনেছেন তিনি। এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই ট্রাম্পের দাবি।

তবে এটাও বলেন, রাশিয়া ছাড়া অন্য অনেক দেশ এই হ্যাকিং এ জড়িত৷ যার  সাথে দা-কুমড়া সম্পর্ক সেই রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি তাকে পছন্দ করে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক৷

বিদায়ী ভাষণে ওবামা বলেছেন, ‘যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তার চেয়ে একটা উন্নততর আমেরিকাকে রেখে যাচ্ছি।’ কিন্তু তার কাউন্টারে ট্রাম্প বয়ান, ‘ওবামা যুগ আমেরিকার জন্য বিপর্যয়। আমার নেতৃ্ত্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি করে সমীহ করে চলবে সব দেশ।

মেয়ের জামাইকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ায় অন্য অনেক অভিযোগের সাথে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন ফেডারাল স্বজনপোষণ আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের নিজেদের আত্মীয়দের সরকারি নিয়োগ দিতে পারেন না৷ কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ওই আইন যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেজন্য জামাই কুশনারের পদের নাম বদলে নেয়া নিতে পারেন ট্রাম্প। এটা যদি শেষ পর্যন্ত হয়, তা দেশের ইতিহাসে আরো একটি নেতিবাচক নজির হয়ে থাকবে।

অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যক্তি ট্রাম্প যেমন চ্যালেঞ্জ মুখে তেমনি উত্তরাধিকার সূত্রে নতুন মার্কিন কান্ডারি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অপেক্ষা করছে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া এবং চীন তো আছেই, তার সাথে বারাক ওবামা ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে তাকে। আর সর্বপরি বিশ্বজুড়ে ত্রাস হয়ে দাঁড়ানো জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়দা ও তালেবানের মতো সংগঠনের চ্যালেঞ্জ তো আছেই।