কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি পয়েন্টে বিশাল আকৃতির একটি মৃত নীল তিমি ভেসে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হিমছড়ির ভিন্ন একটি পয়েন্টে আরো একটি মৃত তিনি ভেসে এসেছে।
আগে আসা তিমির চেয়ে আকারে একটু ছোট এই তিমিটির শরীরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই তিমিটি দেখার জন্য উৎসুক জনতার ভিড় জমিয়েছে সেখানে।
শনিবার সকালের জোয়ারে মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একটু দক্ষিণে পশ্চিমে সৈকতে মৃত্যু তিমি ভেসে আসে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে সাগর সৈকতে মাছ ধরতে গিয়ে তিমিটি দেখতে পেয়ে আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি। এরপর সৈকতের হিমছড়ির অন্য একটি পয়েন্টে তিমি পাওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা আসতে থাকে। সাথে বন বিভাগ ও প্রশাসনের লোকজন ও তিমি টি দেখার জন্য আসে।
মেরিন লাইফ বিশেষজ্ঞ জহিরুল ইসলাম জানান, শনিবার পাওয়া তিমিটি ব্রাইটওয়েল প্রজাতির পুরুষ । ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্যের তিমিটির ব্যাস ১৪ ফুট।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, তিমির শরীরের কয়েকটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কি কারণে এগুলো সাগরে মারা যাচ্ছে তা এখন বলা যাবেনা। এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
সৈকতে তিমি মাছ ভেসে আসার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। নানা বাহনে দলে দলে লোকজন এই তিমি টি দেখার জন্য ছুটে আসতে থাকে।
৭ বছরের শিশু মনিকা রানী দে, মায়ের সাথে তিমি মাছ দেখতে এসেছে। মনিকা বলেন, দিদার কাছে তিমি মাছের অনেক গল্প শুনেছি, আজ মায়ের সাথে এসে প্রথম স্বচক্ষে তিমি মাছ দেখলাম।
মেরিন বিশেষজ্ঞ মুস্তাফা নাঈম বলেন, গভীর সাগরে বড় জাহাজের ধাক্কায় অথবা হত্যার কারণে তিমিগুলোর মৃত্যু হতে পারে। তবে খোঁজ খবর না নিয়ে বা গবেষণা না করে এই মুহূর্তে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
বাংলাদেশের জলসীমায় বাইরে তিমি গুলো মারা গিয়ে হয়তো এই দিকেই ভেসে এসেছে এমন ধারণা করছেন অনেক পরিবেশবাদী।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ২ দিনে ২ টি তিমি কক্সবাজার সাগর উপকূলে ভেসে এসেছে। দুটি তিমি মাছের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সাগরের বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ হয়েছে। অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গভীর সাগরে কোন দুর্যোগ হয়েছে , এতেই তিমি সহ সাগরের প্রাণীগুলো মারা পড়ছে। আগামী কয়েক দিন এরকম তিমি সহ সাগরের নানা প্রাণী ভেসে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই পরিবেশ সংগঠক।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানিয়েছেন, শনিবার ভেসে আসা তিমিটি ও পুরুষ জাতের। কি কারণে সাগরে এগুলো মারা পড়ছে এর জন্য গবেষণা করতে হবে। শুক্রবার উদ্ধার হওয়া তিমির শরীরের বিভিন্ন অংশ নিয়ে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে হিমছড়ি পয়েন্ট থেকে শুক্রবার উদ্ধার হওয়া তিমি মাছ টি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রামু উপজেলা প্রশাসন সৈকতের বালিয়াড়িতে পুঁতে ফেলেছে।
রামু উপজেলা নির্বাহি অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শুক্রবার উদ্ধার হওয়া তিমিটি মাটিতে পুঁতে ফেলেছি। শনিবার উদ্ধার হওয়া তিমি টিও যেহেতু রামু উপজেলায় পড়েছে , তাই সে তিমি কেও সৈকতে পুঁতে ফেলা হবে। তবে তার আগে ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় শরীরের অংশ সংগ্রহ করা হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, কক্সবাজার সৈকতে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই টি তিমি ভেসে আসার ঘটনা আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। এর সাথে জড়িত সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে এর কারণ জানার জন্য দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা হবে।