এমনিতেই আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনাঞ্চল কম, তারপর যা আছে সেগুলোও হারিচ্ছে যাচ্ছে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে। এমনই এক বনাঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের-সাঙ্গু-মাতামুহুরি। এ বনাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় স্থানীয়দের নির্ভরতা বাড়ছে, সঙ্গে গাছ চুরি করছে প্রভাবশালীরা, যার ফলে হারাতে বসেছে সরকার ঘোষিত এ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য।
পরিবেশবিদরা বলছেন, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ বনাঞ্চলের অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী।
চট্টগ্রামের সাঙ্গু-মাতামুহুরীর অববাহিকায় রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩শ’ ৩২ হেক্টর আয়তনের বনাঞ্চল। বনাঞ্চলের মাঝখান দিয়ে যুগযুগ ধরে বয়ে চলেছে নদী। সাঙ্গু-মাতামুহুরী বনাঞ্চলে হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বন্য শুকর, ভালুকসহ রয়েছে বিরল প্রজাতির নানা জাতের প্রাণী। আদি বা ভার্জিন বনাঞ্চলখ্যাত সাঙ্গু-মাতামুহুরী বনাঞ্চলকে ২০১০ সালে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকার।
তবে সময়ের সাথে সাথে এ বনাঞ্চলকে ঘিরে মানুষের বসতি বেড়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেকেই জুমচাষসহ নানা উপায়ে এ বনাঞ্চলকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেছেন। ফলে গাছ কাটা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বনাঞ্চল। গাছ না থাকায় শুকিয়ে যাচ্ছে নদীও।
এ অবস্থা থেকে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বনাঞ্চল ও নদী রক্ষায় বান্দরবন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বন বিভাগ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন এলায়েন্সের উদ্যোগে আলোচনা সভা হয়।
সভায় সাঙ্গু-মাতামুহুরির অববাহিকা এবং রক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষায় কর্মকৌশল নির্ধারণের দিক নিদের্শনা দেওয়া হয়।
বন অধিদপ্তরের সহকারি প্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, প্রথমে এখানকার লোকদের বোঝাতে হবে তারপর পরিস্থিতি পুনরায় ঠিক করার জন্য প্রজেক্ট নেওয়া যেতে পারে। তা না হলে বনসম্পদ ধ্বংস হতেই থাকবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বনিক বলেন, এমনও পাড়া আছে যেখানে পাঁচজনের বেশি বসবাস করে না, কোনো পাড়ায় বাস করে মাত্র দুই জন। তাদের পুনর্বাসন করা খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু তারা কিছুতেই আসবে না।
নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমরা একটু দেরিতে শুরু করেছি। বাংলাদেশ ২০১১ সনে ১৮এর ক ধারা সংযোজন করে রাষ্ট্র বলছে প্রকৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন, দূষণ করবেন না, গাছ লাগাবেন, প্রকৃতিকে বাঁচাবেন। মানুষ ভালো থাকতে হলে প্রকৃতিকে ভালো থাকতে হবে। একটা আরেকটার সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি রক্ষায় সাঙ্গু-মাতামুহুরির অববাহিকা এবং বনাঞ্চল রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। বলেন, সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বান্দরবান এখনো বাংলাদেশের সেরা জায়গা। এই সেরা জায়গাটা আমরা ধরে রাখতে না পারলে আমাদের সৌন্দর্য সব শেষ হয়ে যাবে। বান্দরবান, সিলেট ও সুন্দরবনে আমাদের যতটুকু বন্যপ্রাণী, বন, ও বনাঞ্চল আছে সেটুকুকেই তো ধরে রাখতে হবে আমাদেরই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনাঞ্চল সংরক্ষণে জনগণের সচেনতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বনাঞ্চলের ওপর স্থানীয় আদিবাসীদের নির্ভরতা কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।