এইসব দিনরাত্রিতে নাজমুল হাসান পাপন যে খাতাটি নিয়ে বসছেন কিংবা বসবেন, তাতে নিশ্চিতভাবে লেখা থাকার কথা কোচ চলে যাওয়ার লাভ-ক্ষতি। বিসিবি সভাপতির হিসেব জানার আগে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের তিন পরিচিত মুখ চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে হাথুরুসিংহে সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন। তার সারমর্ম একটাই, ঠিক এই মুহূর্তে তিনি চলে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে থেকে গেলে কোনও লাভ নেই।
‘সামনে বিশ্বকাপ। তাকে ঘিরে বিসিবির একটা পরিকল্পনা ছিল। এই মুহূর্তে তিনি চলে গেলে সেটা থমকে যাবে। আবার থেকে গেলে তাকে দিয়ে আদৌ কোনও লাভ হবে না। যেভাবে চলছিল সেভাবেই দল চলবে।’ ফোনালাপে বলছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ।
হাথুরুসিংহের একক আধিপত্য হুহু করে বাড়ার দিনগুলোতে নির্বাচক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ফারুক। বিসিবির পক্ষ থেকে সব সময় দাবি করা হয়, হাথুরুকে একক ক্ষমতা কোনোদিন দেয়া হয়নি। অথচ ফারুক এদিন বললেন হাথুরু সবসময় একাই সব করতে চাইতেন, ‘দল নির্বাচন থেকে গেমপ্লান, সবকিছু তিনি একাই করতে চান। এসব ঠিক না। তার সঙ্গে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বোর্ডের চুক্তি। এর আগে বিসিবি তাকে ছেড়ে দিলে বেতনভাতা সব দিয়ে দিতে হতো। এমন একটি চুক্তিকে সম্মান না দেখিয়ে তিনি নিজে চলে যেতে চাইছেন!’
ফারুক মনে করেন বাংলাদেশ দল যে এত ভালো খেলছে, তার পেছনে কোচের একার অবদান নেই, ‘তার অধীনে দল ভালো খেলেছে, এটা স্বীকার করতেই হবে। এমন ভালো করার পেছনে নির্বাচক থেকে শুরু করে বোর্ডের কর্মকর্তাদেরও কৃতিত্ব রয়েছে।’
হাথুরুসিংহের অধীনে খেলা হয়নি মোহাম্মদ আশরাফুলের। কিন্তু সতীর্থদের কাছ থেকে আলোচিত এই কোচ সম্পর্কে নানা কথা শুনতেন। সেই শোনা কথা আর নিজের পর্যবেক্ষণ থেকে সাবেক অধিনায়কের মনে হয়েছে হাথুরুসিংহে ‘অসাধারণ’ কোচ। পল্লবীর একটি রেস্তোরায় বসে বৃহস্পতিবার রাতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কোচ ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেন তিনি, ‘নিশ্চিতভাবে হাথুরুসিংহে কোচ হিসেবে অসাধারণ। অন্য কোচদের থেকে তার চিন্তাচেতনা আলাদা। কিভাবে জিততে হয় ভালো বোঝেন। ব্যাটসম্যানদের ভালো স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু বিষয় তার বিপক্ষে যায়। তিনি ঘরোয়া খেলা দেখেন না। পছন্দের ক্রিকেটারদের বেশি মূল্যায়ন করেন।’
যদি চলে যেতে চান তাহলে? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে এতটুকু দেরি করেননি আশরাফুল, ‘তাহলে যেতে দেয়া উচিত। কারণ কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। থেকে গেলে এভাবে দলকে ভালো খেলানো কঠিন।’
প্রবীণ ক্রীড়া বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী হাথুরুর এমন চলে যাওয়ার ইচ্ছাকে অশোভন বলছেন, ‘তিনি যা চেয়েছেন সব পেয়েছেন। তার কথা মতো বিসিবি চলেছে। এত কিছুর পর তার এমন সিদ্ধান্ত আমার কাছে শোভনীয় মনে হয়নি। সাউথ আফ্রিকায় আমরা খারাপ করেছি। এমন পরিস্থিতিতে তার উচিত ছিল দলের অবস্থার উন্নতি করা। অন্তত দেশে ফিরে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারতেন।’
হাথুরুসিংহে আসার পর দেশের ক্রিকেট পরিস্থিতি কোন অবস্থায় গেছে, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে জালাল আহমেদ বলেন, ‘সাফল্য-ব্যর্থতা বিবেচনা করলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। দল হিসেবে সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু কিছু ব্যক্তি খেলোয়াড়ের ক্ষতি হয়েছে। অনেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে পড়ে মনোবল হারিয়েছে।’
কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নির্দিষ্ট করে নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিজয়ের কথা বলতে পারি। এছাড়া মুমিনুল রয়েছে। তার মতো প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়কে টেস্টের তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। পরে সেখান থেকে বাদ দিয়ে দলে নিয়েছেন। এরপর আবার টি-টুয়েন্টি, ওয়ানডে দলেও তাকে দেখেছি। এতে তার ক্ষতি হয়েছে। দুজন লেগস্পিনারের কথা বলি। যুবায়ের হোসেন লিখন এবং তানভীর হায়দার। তাদের চেষ্টা করেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। নাসির যে গুডবুকে নেই, এ ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। যারা দল থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের কথা তিনি ভুলে গেছেন। সব মিলিয়ে সাজঘরের আবহাওয়াও এলোমেলো।’
‘আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি একটা গোছানো দল পেয়েছিলেন। আগের কোচরা একটা দল তৈরি করে গিয়েছিলেন। হাথুরুসিংহে এসেই মাশরাফী, তামিম, সাকিব, মুশফিকের মতো প্রতিষ্ঠিতদের হাতে পান। সেই পরিবেশটা তিনি বরং নাড়িয়ে দিয়ে গেলেন।’ এর সঙ্গে প্রথম দুজনের মতো জালাল আহমেদও একটি ‘কমন’ কথা বলেছেন। যা এতক্ষণ পাঠকদের জানানো হয়নি।
‘কারো জন্য কিছু থেমে থাকে না…।’