গুলশানে অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে রোজার সময় গত বছরের ১ জুলাই জঙ্গি হামলার দিনক্ষণ হাসনাত করিমই ঠিক করে দিয়েছিল বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে, তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তদন্ত পুরোপুরি শেষ হলে তার সংশ্লিষ্টতাসহ সব কিছু জানানো হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুলশানের হলি আর্টিজানে জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ হওয়ার পর বেসরকারী নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাতের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহের কথা উঠে আসে ।
গত বছরের ৩ আগস্ট হাসনাত রেজাউল করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। পরে হাসনাতকে গুলশান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে সে কাশিমপুর কারাগারে আছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে হাসনাত করিম। ঘটনাস্থলে থাকা ও পুরো বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য আগে থেকেই মেয়ের জন্মদিন পালনের নামে হলি আর্টিজানের দুটি টেবিল বুকিং দিয়েছিল সে। নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে ঘটনার কিছুক্ষণ আগে রাত ৮টার দিকে সে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে হাজির হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত করিম জানায়, হামলার মাস্টার মাইন্ড তামিম চৌধুরী ছাড়া হামলাকারীদের কাউকেই সে চিনত না। ঘটনার রাতে তামিম চৌধুরী হলি আর্টিজান বেকারির সামনে হামলাকারীদের রিসিভ করে পরে অজ্ঞাত জায়গায় চলে যায়।
তদন্ত কর্মকর্তারা আরো বলেছেন, হলি আর্টিজানে হামলার রাতে হাসনাতের দায়িত্ব ছিল দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে হত্যার ভিডিওচিত্র ধারণ ও মোবাইলের বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে সেটি দেশের বাইরে পাঠানো।
গুলশান হামলায় হাসনাত রেজাউল করিমের সম্পৃক্ততা কোন পর্যায়ের জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: তদন্ত শেষেই তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আমরা জানাতে পারবো।
তিনি বলেন: হাসনাত করিম এই মামলার সাসপেক্টেড আসামি। সে কারণেই তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং এখন সে কারাগারে আছে।
হাসনাত করিমের জন্ম বাংলাদেশে। তবে কিশোর বয়সেই সে যুক্তরাজ্যে চলে যায়। সেখানে কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি ইন লন্ডন থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি লাভ করে। পরে লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর করার আগে ডব্লিউএস অ্যাটকিনসে কাজও করে কিছুদিন। ১৯৯৩ সালে হাসনাত চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। পরে আবার ফিরে আসে বৃটেনে। গত দশকের শুরুর দিকে সে বাংলাদেশে চলে আসে।
দেশে ফিরে হাসনাত ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। তবে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য করে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ।