চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘সৎ অফিসারের সাহসী পদক্ষেপ’ ও হাইকোর্টের মন্তব্য

অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া কোনো সৎ অফিসারকে বদলি করা হলে সে ডিমোরালাইজড (মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে) হয়ে যায়। এবং তার মন ছোট হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে এক রিটের শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের আলোচিত বদলির প্রসঙ্গে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এই মন্তব্য করে।

মঙ্গলবার এ রিট আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

এসময় এ আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আড়ংয়ে ৭’শ টাকার পাঞ্জাবি কত টাকা রেখেছে দেখেছেন? এটা যে বন্ধ করতে গেছে তাকে আবার বদলি করে দেওয়া হয়।’

তখন আদালত বলেন, ‘সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার পর সৎ অফিসারকে বদলি করা হলে সে ডিমোরালাইজড হয়ে যায়। এবং তার মন ছোট হয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা আর কত করবেন? সব কিছুতে প্রধানমন্ত্রীকে কেন ডাইরেকশন দিতে হবে? সেক্রেটারিরা কি করেন? সবকিছুতে প্রধানমন্ত্রীকে ইন্টারফেয়ার করতে হলে এদের (সেক্রেটারিদের) থাকার দরকার কী। যারা বন্ধের দিনে (বদলি) করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল।’

গত ৩ জুন ঢাকার উত্তরার আড়ংয়ে অভিযান চালিয়ে পণ্যের দাম বেশি রাখার দায়ে জরিমানা করার পাশাপাশি ওই আউটলেটকে একদিনের জন্য বন্ধ করে দেন মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। যদিও পরে পণ্যের দাম বেশি লেখার বিষয়টি ভুল স্বীকার করার পর তা ‍খুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু ওই দিনই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ উপ-পরিচালককে খুলনায় বদলির আদেশ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই আদেশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার বদলির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

মনজুর শাহরিয়ারের বদলির আদেশের সমালোচনা করে জাতীয় সংসদেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১২ জুন সংসদে তিনি বলেন, ‘রোজার সময়, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। বেশ কিছু বড় বড় জায়গায় একজন অফিসার হাত দিল বলে তার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা হঠাৎ করে নেওয়া হল- এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না।

বরং আমি বলে দিয়েছি যে, তাকে আবার ওই দায়িত্বেই দিতে হবে। সাধারণ ছোটখাট সেগুলো ধরতে পারবে, আর বড় অর্থশালী, সম্পদশালী হলেই তাদের হাত দেওয়া যাবে না; তাদের অপরাধ অপরাধ না, এটাতো হয় না।’

আজ মঙ্গলবার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে করা রিটের আদেশে হাইকোর্ট সারাদেশের ফার্মেসিতে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার ও ধংসের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিপণনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ‍নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। ওষুধের ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও সংরক্ষণ বন্ধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপ পরিচালক,পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ফার্মেসিতে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি, সংরক্ষণ ও সরবরাহকারীদের সনাক্ত করতে পৃথক অনুসন্ধান কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং কমিটি কি ব্যবস্থা নিয়েছে তার একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এবিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৬ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে গত ১০ জুন এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন: ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এরপর এ বিষয়ে সংবাদপত্রে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় তা যুক্ত করে ১৭ জুন হাইকোর্টে রিট করে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ রুলসহ আদেশ দিলেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।