চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

স্বস্তি থাকলেও সন্তুষ্টির কারণ নেই

সামাজিক নানা অগ্রগতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেকের জন্য ঈর্ষণীয়। সামাজিক বিভিন্ন সূচকের বিশ্লেষণে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বেই এক আদর্শ উদাহরণ। সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়ক কর্মসূচি, বিভিন্ন স্বেচ্ছা উদ্যোগ, বেসরকারি খাতের ইতিবাচক ভূমিকা; সর্বোপরি সাধারণ মানুষের সচেতন ভূমিকায় এ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে আরো একটি অর্জনের স্বীকৃতি মিলেছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০১৮-তে বাংলাদেশ ১১৭টি দেশের মধ্যে আছে ৮৬তম অবস্থানে। গতবারের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

যে চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ওই গবেষণা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: অপুষ্টি, খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা, কৃশকায় বা শীর্ণকায় শিশু ও শিশুমৃত্যুর হার। সবগুলো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ভালো।

প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশি। খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর করা প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ক্ষুধা দূর করার ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি এগিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গত তিন বছর ধরেই ক্ষুধা দূর করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি করে আসছে বাংলাদেশ।

বিপরীতে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ভারতের ক্ষুধা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আগের বছর ভারতের অবস্থান ছিল ৯৭তম, এবার তা ১০৩ নম্বরে নেমে গেছে। পাকিস্তানের অবস্থানেরও কোনো উন্নতি হয়নি। তিন বছর ধরে ১০৬ নম্বর অবস্থানেই আছে পাকিস্তান।

প্রতিবেশী দুই দেশের এরকম অবস্থার মধ্যে আমরা আরো একটি আশঙ্কার খবর জেনেছি ওই প্রতিবেদন থেকে। এতে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি থেকে বেড়ে ১২ কোটি ৪০ লাখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশেরও অগ্রগতির মধ্যে এমন তথ্য জানা গেছে যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। ২০১৮ সালের ক্ষুধা সূচকে জানা যাচ্ছে যে, দেশের ৩৬ লাখ মানুষ এখনো মারাত্মক ক্ষুধাঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।

এরকম অবস্থায় যখন ‘ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনো’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে তখন আমাদের চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার পাশাপাশি কার্যকর উদ্যোগ নেয়াটাও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়ন উদ্যোগগুলোর মধ্যে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনের সুযোগ রাখতে হবে। নইলে শুধু অবকাঠামো উন্নয়নে সূচকের অগ্রগতি হলেও দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর হবে না। দারিদ্র্য দূর করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরকম চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি নতুন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বাংলাদেশ একদিন ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূর করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেজন্য যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি জরুরি সেটা অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। সেই স্থিতিশীলতা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করি।