ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মাঝে ফলাফল প্রকাশ করা পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং আরো বিশ্বস্ত হবে।
মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যলয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে ‘ঘ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে বহিষ্কার করতে পারি না। প্রমাণের ভিত্তিতে সেটা করতে হবে। অচিরেই তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গুজব ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যে যেই অবস্থানে চিহ্নিত হবে, তাকে বহিষ্কার করা হবে। কোনো ধরনের জালিয়াতি করে কেউ টিকবে না। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান শক্ত।
উপাচার্য বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের একটি অভিযোগ আসলেও প্রশাসনের বড় সাফল্য যে তাদেরকে আটক করে ফেলেছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অর্জনও বটে। আমরা গভীরে প্রবেশ করব। যাকে যে অবস্থায় চিহ্নিত করা হবে, লেখাপড়া শেষ করে সার্টিফিকেট নিয়ে চলে গেলেও তার সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে।
তিনি আরো বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়েছি। তারা ডিজিটাল জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে তারা অচিরেই ধরা পড়বে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন ব্যবস্থা নেব। এতে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মানুষের আস্থা কমবে না, আরও বাড়বে।
পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার আমাদের নেই। কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া ব্যবস্থা নিতে পারবো না।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অনলাইন ভর্তি কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ প্রমুখ।
এ বছর সমন্বিত (ঘ-ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে ১৮ হাজার ৪৬৩ জন শিক্ষার্থী যা মোট পরীক্ষার্থীর ২৬ শতাংশ (২৬.২১%)। যেটি বিগত বছরের প্রায় দ্বিগুণ এবং স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
১৬১৫ টি আসনের (বিজ্ঞান ১১৫২, মানবিক ৫৩, ব্যাবসায় ৪১০) বিপরীতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৭০ হাজার ৪৪০ জন।
মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় সর্বোচ্চ ১৮৫.৩০ নাম্বার পেয়ে প্রথম হয়েছেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের তাসনিম বিন আলম৷ মানবিক শাখায় ১৮৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে মাদ্রাসা বোর্ডের মুজাহিদ আব্দুল্লাহ মারুফ। ব্যবসা শাখায় সর্বোচ্চ ১৯১.৬ নাম্বার পেয়ে প্রথম হয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মো. জিহাদ হাসান আকাশ।
পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান (মেধাক্রম ৩৫০০), মানবিক (মেধাক্রম ৬০০) এবং বাণিজ্য (মেধাক্রম ১০০০) পর্যন্ত আগামী ২২ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ফরম ও বিষয় পছন্দক্রম পূরণ করতে বলা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিভিন্ন কোটায় আবেদনকারীদের আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোটার ফরম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে এবং যথাযথভাবে পূরণ করে ওই সময়ের মধ্যে ডিন অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে৷
ফলাফল নিরীক্ষণের জন্য ফি প্রদান সাপেক্ষে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবেরর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসে আবেদন করা যাবে৷
পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য admission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকেও জানা যাবে৷
ফলাফল বয়কট করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলন
এদিকে ফল প্রকাশের পরপরই তা বয়কট করে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
এ সময় তারা তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো: অবিলম্বে ঘ ইউনিটের পরীক্ষা ও ঘোষিত ফলাফল বাতিল করতে হবে, প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও ঘ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক সাদেকা হালিমকে পদত্যাগ করতে হবে।
এ দাবিতে তারা বুধবার সন্ধ্যা ৬ টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল করবে বলে জানানো হয়েছে।