বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণে কোনো হেরফের হয়নি দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, স্বর্ণের মান নিয়ে যে হেরফেরের কথা বলা হচ্ছে, তা করণিক ভুলের কারণে হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হাসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ, কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী ও ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের মহাব্যবস্থাপক সুলতান মাসুদ আহমেদ প্রমুখ।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
একটি আংটির স্বর্ণ প্রথম থেকেই কিছুটা নিম্নমানের ছিল, কিন্তু করণীক ভুলে তা ভাল স্বর্ণ হিসেবে লেখা হয় যা শুল্ক গোয়েন্দারা আবার পরীক্ষায় মানের হেরফের রিপোর্ট করে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের রবিউল হাসান। তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, একটি আংটির স্বর্ণের মানের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব স্বর্ণকার যখন এটি পরিমাপ করেন তখন বলেছিলেন, সেই আংটিতে ৪০ শতাংশ স্বর্ণ আছে। কিন্তু পরে প্রতিবেদন করার সময় ভুলে বাংলা ৪০ কে ইংরেজি ৮০ লিখা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ভল্ট পরিদর্শন শেষে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টটি সঠিক নয় দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই রিপোর্ট মোটেও সঠিক নয়। বস্তুনিষ্ঠ নয়। কারণ স্বর্ণের মান নির্ণয়কারী একটি প্রতিষ্ঠিত জুয়েলার্স বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণগুলো পরিমাপ করে। তারা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অর্থাৎ কস্টি পাথর দিয়ে স্বর্ণ পরিমাপ করে। তারা পরিমাপ করে যে পরিমাণ বলে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক তা গ্রহণ করে এবং এনবিআরকে তা জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পত্রিকার প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ওই স্বর্ণকারকে অবহিত করা হলে তিনি বলেছেন, ওই স্বর্ণ মাপার সময় বলা হয়েছে ৪০ শতাংশ স্বর্ণ রয়েছে। কিন্তু লেখা হয়েছে ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ এখানে করণিক ভুল হয়েছে।
রবিউল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার ভল্টে রাখা স্বর্ণের গুণগত মান যাচাই করেছেন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আর শুল্ক গোয়েন্দারা করেছেন মেশিনের সাহায্যে। তাই গুণগত মানে হেরফের হয়েছে। অর্থাৎ ২২ ক্যারেট আর ১৮ ক্যারেট নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টের নিরাপত্তা সুপার, সুপার এবং সুপার এমন দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকরে এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভল্টে এখানে গভর্নর প্রবেশ করতে হলেও যথাযথ পাস ও নিবন্ধন করতে হয়। ৩/৪ স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে। তাছাড়া সিসি ক্যামেরা ও পুলিশ তো আছেই। তাই এই ভল্ট থেকে রক্ষিত কোনো জিনিস বাইরে নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে পুরোনো যে পদ্ধতি রয়েছে সে পদ্ধতিতেই স্বর্ণের মান যাচাই করা হয়। আর আধুনিক মেশিন বলতে যা বুঝানো হচ্ছে সেসব মেশিন একই পরিমাণ স্বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ বা মান দেখায়। একই জিনিসে ১০টা মেশিন ১০ রকম তথ্য দেয়। তাহলে কোন তথ্য বিশ্বাস করবে। কিন্তু বাংলাদেশ নয় বিশ্বেও এ সংক্রান্ত এমন কোনো যন্ত্র নাই যে, স্বর্ণের মাপ সঠিক পরিমাণে দিতে পারে। এছাড়া যন্ত্রগুলো স্বর্ণের একেবারে ভেতরে যেয়ে সঠিক মান যাচাই করতে পারে না। যন্ত্রগুলো স্বর্ণের সর্বোচ্চ ৫ এমএম থেকে ৮ এমএম ভেতরে যেতে পারে। অতএব স্বর্ণের সঠিক মান পেতে হলে ওই জিনিস ভাঙ্গতে হবে। কিন্তু ভেঙ্গে দেখার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নাই।
তাহলে শুল্ক গোয়েন্দার এই প্রতিবেদন ভুয়া কিনা এবং এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দারা বাইরের থেকে মেশিন ভাড়া করে এনে স্বর্ণের মান যাচাই করেছে। ওই মেশিনের কোনো কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নাই। এটা সম্পুর্ণ তাদের বিষয়। অতএব এটা ভুল কিনা সে বিষয়ে বলতে পারবো না।
আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, শুল্ক গোয়েন্দারা নিজেরাই স্বর্ণ পরিমাপ করেছে। নিজেরাই প্রতিবেদন করেছে। এর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিমাপের কোনো মিল নাই। পরিদর্শনে এসে তারা যখন এই স্বর্ণ পরিমাপ করেছে তখন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আনবিক কমিশনের নিকট যেয়ে পরিমাপ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে সময় শুল্ক গোয়েন্দারা তাতে রাজী হননি।