বলা হয় আমাদের নিত্যদিনে সেলফি একটি অপরিহার্য অংশ। সেলফি ছাড়া যেন আমাদের চলেই না। কথায় কথায়, উঠতে বসতে, ঘুমে জাগরণে এমনকি অপারেশন থিয়েটারে পর্যন্ত সেলফি আপন মহিমায় তার জায়গা করে নিয়েছে। সেলফি প্রেমিরা বলছেন সেলফি নাকি তাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী! মনোবিশ্লেষকরা সেলফির ভালোমন্দের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন। কারণে অকারণে মানুষের এই সেলফি নির্ভর হয়ে পড়াকে বিশ্লেষকরা এক ধরনের রোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মানুষের মধ্যে যেভাবে ক্রমাগত সেলফি তোলার প্রবণতা বাড়ছে তাতে করে সামনের দিনে এই প্রবণতা মাদকাসক্তির পর্যায়ে চলে যায় কিনা তা নিয়ে তারা শংকা প্রকাশ করেছেন।
এখন প্রশ্ন কবে থেকে, কিভাবে আমাদের মধ্যে এই সেলফি রোগ সংক্রমিত হল? গবেষকরা গবেষনা করছেন। তথ্য উপাত্ত বের করার কসরতও হয়ত করছেন। তা তারা করতেই পারেন তবে সেলফি কে কবে কোথায় কিভাবে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন তা নিয়ে কথা থেকে যায়। আমাদের উপমহাদেশে সত্যজিৎ রায়ই প্রথম সেলফি তুলেছিলেন সেরকম প্রমাণাদি পাওয়া যায়।
সম্ভবত ১৯৩৪ কিংবা ১৯৩৫ সালের কথা। কিশোর সত্যজিৎ ঠিক করলেন মাকে নিয়ে একটি ছবি তুলবেন। মা সুপ্রভা দেবীকে রাজীও করালেন কিশোর। কিন্তু সেই ছবিতে শুধু মা আর সত্যজিৎ থাকবে কেন? বাবা সুকুমার রায় থাকলে মন্দ কি! বাবাকে ছবিতে রাখতে পারলে বেশ হয়। কিন্তু বাবা তো গত হয়েছেন সত্যজিৎ যখন দু বছরের তখন। তাহলে উপায় কি! ঘরে যে বাবার একটি মাত্র ছবি আছে। বুদ্ধি বের করলেন সত্যজিৎ। বাবার ছবিকে রাখা হল ফ্রেমে, ছোট একটি সেন্টার টেবিলে।
ঠিক হল মা। ছেলে আর মৃত বাবার ছবি রেখে একই ফ্রেমে তিন জনের ছবি তোলা হবে। কিন্তু তিনজনের ছবি একত্রে করে ছবিটা তুলবে কে? আর তুললে কিভাবে?
কিশোর সত্যজিৎ তার বুদ্ধি খাটালেন। তিনি করলেন কি ক্যামেরার সাটারের সুইচের সাথে সুতো এমনভাবে বেঁধে দিলেন যাতে নিজের বাম হাতে সুতো টানলেই ছবি উঠে যায়। সত্যজিৎ এর বুদ্ধিতে কাজও হল দারুণ।
কিশোর সত্যজিতের তোলা সেই ঐতিহাসিক ছবিটি কি আসলে শুধুমাত্র একটি সাধারণ ছবি ছিল?
আলোকচিত্রিরা বলছেন বিশ্বখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা সত্যজিত এর তোলা সেই ছবিটিই পৃথিবীর প্রথম সেলফি।
পৃথিবীর ইতিহাসে সেলফির আবিষ্কার , কে প্রথম সেলফি তুলেছিলেন এধরনের বিতর্ক নিয়ে আলোকচিত্রিদের এই বক্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা সমালোচনা উঠে আসতেই পারে কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের তোলা এই ছবিটিকে অগ্রাহ্য করতে করা যাবে কি!