১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। এদিন বাঙালি জাতির জন্য আবেগের, দ্রোহের, চেতনার, আকাঙ্ক্ষার এক অপরূপ সম্মিলন ঘটান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চের সেই ভাষণ আজও এক অমরসৃষ্টি। ১৯৭১ সালের এই ভাষণটির আবেদন ৫০ বছর পরও সমান উজ্জ্বল। সেই ভাষণে ছিল এমনই এক যাদু যা মাত্র নয় মাসেই অসম যুদ্ধে এনে দিয়েছে সফলতা। বসন্তের সেই বিকেলে মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস তুলে ধরেন।
স্বাধীনতা পূর্ব এই ভাষণের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ বাক্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাকামী সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে গণমানুষের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে সেই মহাকাব্য।
এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পৃথিবীর ইতিহাসে আরও অনেক স্বাধীনতাকামী নেতারা ভাষণ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার জন্য কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বাস্তবতা অন্যদের থেকে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে, যা সত্যিই গর্বের। কবি নির্মলেন্দু গুণ এর ভাষায় বললে:
‘‘গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনালেন
তাঁর অমর কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।’’
এবারের ৭ মার্চের মর্যাদা এবং গুরুত্ব আরও বেশি, আলাদা। এমন এক সময়ে এবার ৭ মার্চ উদযাপন হচ্ছে, যখন আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী চলছে। এছাড়া বাংলাদেশ কয়েকদিন আগেই স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সামনে রেখে চলার কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এজন্য দেশের সর্বস্তরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে বলে আমরা মনে করি। বাঙালি জাতিসহ বিশ্ব ঐতিহ্যের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।