চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সেইসব উজ্জ্বল দিনের স্মৃতি মনে পড়ছে খুব: ববিতা

আমজাদ হোসেনের সংকটাপন্ন অবস্থায় মর্মাহত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ খ্যাত অভিনেত্রী ববিতা

‘আমিতো আমজাদ ভাইয়ের ম্যাক্সিমাম ছবিতে কাজ করেছি। সেই ‘নয়ণমনি’ দিয়ে শুরু করলাম, এরপর ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ তারপর একে একে করলাম, সুন্দরী, কসাই, বড় বাড়ির মেয়েসহ আরো বেশ কয়েকটা ছবি আমি করেছি। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবি করে আমি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে গিয়েছিলাম। সেসময় ছবিটি দেখে সেখানে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন মৃণাল সেনের মতো নির্মাতারা। আমজাদ ভাইয়ের এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় সেইসব উজ্জ্বল দিনের কথা মনে পড়ছে খুব।’

ঢাকাই চলচ্চিত্রের দাপুটে নির্মাতা আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। ব্রেন স্ট্রোক করে গত তিনদিন ধরে ইনটেনসিভ কেয়ারে লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনি। তার বাঁচা মরা নিয়ে সন্দিহান চিকিৎসকরাও। আর এমন অবস্থায় প্রিয় নির্মাতাকে নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে স্মৃতিকাতর ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ খ্যাত অভিনেত্রী চিত্রনায়িকা ববিতা।

ববিতাবেশ কয়েক মাস তিনি বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন। একমাত্র ছেলেকে সময় দিতে কানাডায় গিয়েছিলেন তিনি। ফিরলেন পরশু। আর বিমান বন্দরে নেমেই শুনেছেন আমজাদ হোসেনের বর্তমান অবস্থার কথা। তুখোর এই নির্মাতাকে নিয়ে স্মৃতিকাতর ববিতা। বললেন, আজই(বুধবার) আমজাদ ভাইকে দেখতে যাবো হাসপাতালে। মনে প্রাণে চাই আমজাদ ভাই সুস্থ হয়ে উঠুন।

এরপর আমজাদ হোসেনের সাথে কাজের স্মৃতি তুলে ধরে ববিতা বলেন, আমজাদ ভাইয়ের কোনো তুলনা হয় না। তার পরিচালনায় ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিতে অভিনয় করে মস্কোসহ আরো বেশকিছু ফেস্টিভালে ঘুরেছি। এটা বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন। সাংঘাতিক মেধাবী একজন নির্মাতা ছিলেন আমজাদ ভাই।

‘গোলাপী এখন ট্রেন’তো সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের গল্প। যেসময় মুক্তি পায় সেসময়ের প্রতিটি গ্রাম বাংলার মানুষের গল্প। ছবির প্রত্যেকটা ডায়ালগ কি যে অসামান্য ছিলো, ভাবতেও ভালো লাগে এখন। সেসময়তো অফিস আদালতেও ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র ডায়ালগগুলো বলে বেড়াত। বিশেষ করে ওই কথাটাতো ছড়িয়ে গিয়েছিলো মানুষের মুখে মুখে, তিন মহিলা যখন শহরে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে, সেখানে একটি কথা আছে না! যে ট্রেনে উঠার পর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, তোমরা যে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসে এসে ঢুকলা, তোমরা টিকেট কেটেছো? তখন গোলাপী একটা কথা বলে, বাংলাদেশে কোনো কেলাস(ক্লাস) নাইক্যা, আমরা হগলেই এক কেলাসের(ক্লাস) মানুষ। এই যে এই ডায়ালগগুলো, কি অসাধারণ ভাবেই না আমজাদ ভাই ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার চরিত্রদের মধ্য দিয়ে। -বলছিলেন স্মৃতিকাতর ববিতা।

আমজাদ হোসেন সমকালীন সময়ের মেধাবী নির্মাতাদের একজন ছিলেন জানিয়ে ববিতা আরো বলেন, আমিতো জীবনে তিনশোর মতো ছবিতে কাজ করেছি, কিন্তু আমজাদ ভাইয়ের ছবিগুলো তারমধ্যে ছিলো ব্যতিক্রম। তার ছবিগুলো আর্টফিল্ম-ক্যাটাগরির না, কমার্মিশিয়ালিই সব ছবি সুপার ডুপার হিট হয়েছে, কিন্তু ছবির গল্প, ডায়ালগ সব রিয়েলিস্টিক। আসলে তিনিতো জহির রায়হানদের সাথে কাজ করেছেন, জহির রায়হানের অ্যাস্টিস্টও করেছিলেন তিনি।

‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’-গানের লিরিক লেখার প্রসঙ্গ এনে আমজাদ হোসেনকে নিয়ে ববিতা বলেন, আমরা তখন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র শুটিং করছি। ট্রেন যাচ্ছে জামালপুরের দিকে। এরমধ্যেই ট্রেনে বসেই আমজাদ ভাই একটা গান বেঁধে ফেললেন, একেবারে ইনস্ট্যান্ট বসে। গানটি হলো ‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’। অবাক করার মতো বিষয়। তার মতো ট্যালেন্ট মানুষ খুব কমই আছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। পরে এই গানটি রেকর্ড করে এই ছবিতেই ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এই গানটিও সেই সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

গত রবিবার সকালে নিজ বাসভবনে আমজাদ হোসেন ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তখন থেকেই তিনি আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে আমজাদ হোসেনের সংকটাপন্ন অবস্থার কথা শুনে চিকিৎসার সমস্ত দায়ভার নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নানামাত্রিক কাজের জন্য ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। একইসাথে বাংলা একাডেমী পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।