চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সুরে গানে মাতৃপ্রেম ও কিছু কথা

মায়ের চেয়ে আপন কিছু নেই এই তল্লাটে

জাগতিক চাপে মা’কে যতোই দূরে ঠেলে রাখুন, কিন্তু এটা কারো অস্বীকার করার জো নেই যে মায়ের চেয়ে আপন আর কিছু আছে এই তল্লাটে! সন্তান হয়তো মায়ের সাথে কখনো বিরূপ আচরণ করে, জাগতিক টানে হয়তো মায়ের অবদান ভুলে যায়। কিন্তু মা ঠিকই তাদের আগলে ধরেন আমৃত্যু। তাইতো জন হেরিস বলেছিলেন: ‘সন্তানেরা ধারালো চাকুর মত। তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়। আর মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সাথে লেগে থাকে’। মা এমনই। ভৌগলিক অবস্থানের জন্য পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তের মানুষের আচার আচরণও ভিন্ন হয়, কিন্তু সন্তানের সাথে মায়ের যে সম্পর্ক পৃথিবীর সব প্রান্তেই প্রায় একই রকম। মায়ের কোনো পরিবর্তন নেই, পৃথিবীজুড়ে যেনো তাঁর এক শ্বাশ্বত রূপ। এই সর্বংসহা মা‘কে নিয়ে পৃথিবীজুড়ে রচিত হয়েছে প্রচুর গান, কবিতা, গল্প আর সিনেমা। বাংলাতেও কোনো অংশে কম হয়নি। তেমনি মা’কে নিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সকলের বহুবার শোনা কয়টি গান থাকলো মা দিবসের আনুষ্ঠানিকতায়:

দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ
শিল্পী: জেমস, সুর ও কথা: প্রিন্স মাহমুদ
জেমসের গান মানেই অন্যকিছু। অন্যরকম এক ভালো লাগা। আর এই অসম্ভব জনপ্রিয় মানুষটি যদি ‘মা’কে নিয়ে গেয়ে উঠেন, তাহলেতো কথাই নেই। হলোও তাই। মাকে নিয়ে গাওয়া জেমসের ‘দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ’ গানটি সমকালকে জয় করে বাংলা গানের ইতিহাসে অলিখিতভাবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে ‘এখনো দুচোখে বন্যা’ নামের অ্যালবামটি শুধু এই একটি গানের জন্যই সুপার ডুপার হিট করে বলে জানা যায়। গানটি সম্পর্কে তৎকালীন সময়ে জেমস বলেন: ‘মা পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ উপহার। আমি আমার মাকে হারিয়েছি, প্রিন্সও তার মাকে হারিয়েছেন। তাই হয়তো এই গানটি প্রিন্স মাহমুদ এমনভাবে লিখেছেন যারা মা হারিয়েছে, তারা বলতে পারবে এই গানের আসল অর্থ।’

শুধু যারা মাকে হারিয়েছেন তারাই নয় সব শ্রোতার কাছেই এই গানটি ভালো লাগবে।
দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ…

ওই আকাশের তারায় তারায়
শিল্পী: রাশেদ, সুর: শওকত আলী ইমন, কথা: আসিফ ইকবাল
এই গানটি প্রথম শোনা যায় গানের একটি রিয়েলিটি শোতে। রাশেদ জামান এই গানটিতে প্রথম কণ্ঠ দেন। সুর এবং কথায় মায়ের প্রতি যে কাউকে অন্যরকম এক ভালো লাগা তৈরি করে দিবে গানটি। মা’কে নিয়ে গাওয়া এখন পর্যন্ত এতো চমৎকার গান খুব একটা হয়নি। যদিও এই গানটি সবাইকে ছুঁয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ গীতিকার আসিফ ইকবাল। কারণ মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান, মাকে হারানোর যে বেদনা তিনি তা হারে হারে টের পেয়েছেন। তার গানের পরতে পরতে মায়ের প্রতি সেই আর্তিই যেনো উঠে এসেছে। আর রাশেদের কণ্ঠেই এই অমায়িক গানটি যেনো আরো অসাধারণত্ব পেয়েছে। রাশেদের কণ্ঠে ‘ওই আকাশের তারায় তারায়:

পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো
শিল্পী ও সুর: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কথা: গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
এই গানটিতে প্রকৃত মায়ের চেহেরা তুলে ধরেছেন গৌরীপ্রসন্ন বাবু। মা’কে নিয়ে লেখা শুধু বাংলা গানের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও এমন হৃদয় নিংরানো ছুঁয়ে যাওয়া গান খুবই বিরল। মায়ের প্রতি সন্তানের হৃদয়মথিত যে আকুতি, এবং একই সাথে মায়ের সারল্য অসাধারণভাবে শব্দে, বাক্যে গেঁথে দিয়েছেন সুরকার তা অতুলনীয়। ১৯৫৭ সালে উত্তম কুমার অভিনীত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ নামের ছবিতে প্রথম ব্যবহার করা হয় এই গানটি। আর এই ছবির সংগীত পরিচালকও ছিলেন স্বয়ং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবিতে তিনি নিজেই সুর দিয়ে গানটি গেয়েছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবিতে গানটি ব্যবহৃত হয়। এখানে দেখে নিন:

মধুর আমার মায়ের হাসি
সুর: সুধীর লাল চক্রবর্তী, কথা: প্রণব রায়
মায়ের সাথে কারো তুলনা চলে না। মায়ের হাসি, চলন-বলন সবই লেগে গেখে থাকে সন্তানের। মা হয়তো কখনো সখনো দূর আকাশের তারা হয়ে যায়, কিন্তু তবুও সে সন্তানের সুখে-দুঃখে অদৃশ্য ছায়া হয়েই প্রদীপ জ্বেলে রাখেন। মধুর আমার মায়ের হাসি/চাঁদের মুখে ঝরে/মাকে মনে পড়ে আমার/মাকে মনে পড়ে গানটি বাংলায় বহু শিল্পী গেছেছেন। তারমধ্যে অনুপ ঘোষাল এই গানটির জন্য জনপ্রিয়। সাদী মুহম্মদের কণ্ঠে ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’