যুগ যুগ ধরে পুরুষ শাসিত সমাজে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকা নারীদের মুক্তির পথে নিয়ে আসার অন্যতম পথিকৃত মহিয়সী নারী বেগম সুফিয়া কামালের ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ১৯৯৯ সালের এই দিনটিতে বাংলাদেশের মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠিাতা ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি সবাইকে ছেড়ে চলে যান।
৫০ ও ৬০ দশকে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলেনের সময় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশিষ্ট পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ও স্বাধীন বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা বেগম সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের প্রথম নারী যাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়ে দাফন করা হয়েছিলো।
আজকের এই দিনটিতে তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মরণ করতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠানের। কবির স্মরণে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে বেলা ৩টায় মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
বাবা আবদুল বারি ও মা সাবেরা বেগমের মেয়ে বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে শায়েস্তাবাদে এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সারা জীবন নারী মুক্তি, মানবতার মুক্তি ও গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন।
১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘সওগাত’ পত্রিকায়া প্রকাশিত হয়েছিলো। বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন প্রথম বাঙ্গালি মুসলিম নারী যিনি ১৯৩১ সালে ‘ইন্ডিয়ান ওমেন ফেডারেশন’ এর সদস্য হয়েছিলেন।
বিশিষ্ট এই কবি দেশ বিভাগের আগে ১৯৪৭ সালে নারী ম্যাগাজিন ‘বেগম’ এর সম্পাদনা করেন, ১৯৫৬ সালে শিশু প্রতিষ্ঠান ‘কচি কাঁচার মেলা’ সমন্বয়ক ছিলেন।
রাজপথে নেমেছিলেন বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনেও। ৬০ এর দশকে সরকার দ্বারা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের ওপর করা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে আন্দোলন করেন কালজয়ী এই বাঙ্গালি কবি। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১ এর অসহোযোগ আন্দোলন আন্দোলনেও বিশেষ অবদান রাখেন তিনি।
কবি তার লেখা ‘একাত্তরের ডায়েরী’ বইটিতে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালীদের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক অজানা কথা।
স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন ও ৫ সন্তানের জননী এই কবি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সারাজীবন সংগ্রাম করা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’, ‘স্বাধীনতা দিবস পদক’, ‘বাংলা একাডেমি পদক’সহ অর্জন করেছেন প্রায় ৫০টি’র বেশি পুরস্কার।