লক্ষ্য ছিলো বিশ্বকাপের সেরা দশ বোলারের মধ্যে থাকা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি, তবে নয় উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সফলতম বোলারের নাম তাসকিন আহমেদ তাজীম। এমন সাফল্যে দারুণ আনন্দিত এই তরুণ পেসার। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে পাওয়া সাফল্য তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুণ। এ সাফল্যের প্রেরণাকে সঙ্গী করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তাসকিনের লক্ষ্য।
তাসকিনের এখন স্বপ্ন জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় যে একজন পেসারকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে, সেই বিশ্বাস তার আছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর তাকে নিয়ে মাতামাতি।
তবে চোটের কারণে গত নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে খেলতে পারেননি তিনি। তবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে মাঠে নামবেন তাসকিন। ইচ্ছা বিপিএলে ভালো পারফম্যান্সের মাধ্যমে ন্যাশনাল টিমে আগের জায়গাটি করে নেওয়া।
বিপিএল নিয়ে চ্যানেল আইয়ের ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান ‘ফর্ম গ্যালারিতে’ তাসকিন আহমেদ জানান তার স্বপ্ন ও লক্ষ্যের কথা। উপস্থাপক আরিফ চৌধুরীর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তাসকিন তার ব্যক্তিগত পারিবারিক ও আসন্ন বিপিএল নিয়েও জানান পরিকল্পনার কথা।
চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য দুরন্ত তাসকিনের সেসব কথা তুলে ধরা হলো।
চ্যানেল আই অনলাইন: ফিটনেসের কি অবস্থা?
তাসকিন: এখন আমি সম্পূর্ণ ফিট। ফিট আছি বলেই প্রতিদিন মাঠে গিয়ে এখন অনুশীলন করছি। ফিজিও ক্লিয়ারেন্স পেয়েছি। ফিজিও ক্লিয়ারেন্স না পেলে হয়তো টিম ম্যানেজম্যান্ট আমাকে অনুশীলনে করতে দিতো না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সুস্থ হয়েই আগামী একমাস ভালোভাবে খেলতে চাই।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপাতত ন্যাশনাল টিম ও ইনজুরিকে পাশে রেখে বিপিএল’র জন্য কতোটুকু প্রস্তুত?
তাসকিন: আসলে আমি খুব উচ্ছ্বসিত। মূলত আমার শুরুটা বিপিএল থেকেই। গতবারের বিপিএল আসরের সেমিফাইনালে ‘ম্যান অব দ্যা ম্যাচ’ হয়েছিলাম। প্রথম দশ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। তারপর খেলার সুযোগ পেয়েছি ওখান থেকেই আমার ওঠা। তাই বিপিএল নিয়ে আমার স্বপ্ন অন্যরকম। এবারো বিপিএলে ভালো করতে চাই। কারণ লাস্ট দুইটি সিরিজ ইনজুরির কারণে মিস গেছে। তাই বিপিএলে ভালো খেলে ন্যাশনাল টিমের রেগুলার সদস্য হতে চাই।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাহলে প্রস্তুতি কিভাবে নেওয়া হচ্ছে?
তাসকিন: ফিটনেস আগের মতো ফেরত আনার জন্য টিম ম্যানেজম্যান্ট ও কোচের সঙ্গে কাজ করছি। রেগুলার অনুশীলন করছি। আশাকরি আগের মতো ফিটনেস নিয়েই মাঠে ফিরতে পারবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: আগের বিপিএলের তাসকিন আর এবারের বিপিএলের তাসকিন কতোটুকু পার্থক্য রয়েছে?
তাসকিন: আসলে সবকিছু একিরকম আছে। হয়তো পরিস্থিতি বা অবস্থান একটু পাল্টে গেছে। আর কিছুই না। তখন ন্যাশনাল টিমে খেলেনি আর এখন ন্যাশনাল টিমে খেলে খেলছি। কিন্তু তখন একটু বেশি উচ্ছ্বসিত থাকতাম একটি জিনিসের ক্ষেত্রে। মনে মনে ভাবতাম আমাকে কি খেলতে হবে, আর সবার সঙ্গে যখন ছবি তুললো তখন মনে হতো আমার সঙ্গেও কি ছবি তুলবে। কিন্তু বর্তমানে এটা নিয়ে আর ভাবতে হয় না সবাই এমনিতেই ছবি তুলতে আসে।
চ্যানেল আই অনলাইন: মিক্সড খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিযোগীতার কথা মাথায় রেখে পারফর্ম করেন?
তাসকিন: অবশ্যই এখানে যদি প্রতিযোগীতা মনে না করে পারফর্ম করি তাহলে কিন্তু ন্যাশনাল টিমেও জায়গা হবে না। তাই এটাই বেস্ট প্লাটফর্ম এখানে নিজের বেস্ট পারমফম্যান্স দেয়া যায়। তাই ব্যক্তিগত ভাবে আমি চাই আমাদের দেশী খেলোয়াড়রা ভালো পারফর্ম করুক।
চ্যানেল আই অনলাইন: বিপিএলে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে বোঝাপড়া কেমন থাকে?
তাসকিন: অবশ্যই অনেক ভালো থাকে। কারণ বিপিএলে অনেক সিনিয়র খেলোয়ারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুমে পরিচয় হয়, অনেক কথা হয়। আমাদের দেশে অনেক দেশী খেলোয়াড়রা আছে যেমন তামিম ভাই, জিয়া ভাই, নাইম ভাই তাদের থেকে অনেক সময় চেষ্টা করি কিছু শেখার। সঙ্গে ওনারাও শেয়ার করেন তাদের লম্বা ক্যারিয়ারের কিছু অভিজ্ঞতা।
চ্যানেল আই অনলাইন: আগের তাসকিনের ভক্ত আর এখন তাসকিনের ভক্তদের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?
তাসকিন: আসলে ভক্তদের নিয়ে আমার অনেক কাহিনী জড়িয়ে আছে। তারা সবাই আমাদেরকে ভালোবাসে বলে এমনটি ঘটে থাকে। আমার কিছু ভক্ত আছে যারা আমার বাসায় চলে আসে। বেশিরভাগ ছোট্ট ছোট্ট ভক্তরা বেশি বাসায় আসে।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাসকিনের ছেলে ভক্ত নাকি মেয়ে ভক্ত বেশি?
তাসকিন: ভক্ত আসলে দু’রকমই আছে। বর্তমানে মেয়েরা প্রচুর ক্রিকেট খেলা দেখে। যারা ক্রিকেট পছন্দ করে বা আমার খেলা পছন্দ করে তারা মাঝেমধ্যেই আমার বাসায় চলে আসে। তারা যে এমন করে তা হয়তো আমার খেলা বা আমাকে পছন্দ করেই করে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য একটি কথা বলতে চাই কিছু কিছু ঘটনা ঘটে তা খুব দুঃখজনক যেটা আমার শুনলেও খারাপ লাগে।
অনেকে তাদের বাবা-মাকে অস্থির বানিয়ে ফেলে বা কান্নাকাটি করে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। অনেক সময় ব্যস্ত থাকার কারণে দেখা করতে পারি না অনুশীলন থাকে, পড়াশুনা থাকে সবকিছু মিলিয়ে সবার ফোন ধরা, বা দেখা করা সম্ভব হয় না। তাই কারো মনে করার কোনো কারণ নেয় যে আমি আমার ভক্তদের দূরে ঠেলে দিচ্ছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: ইনজুরির কারণে ন্যাশনাল টিমের বাইরে থাকার অভিজ্ঞা বলুন?
তাসকিন: দলে থেকেও দূর থেকে খেলা দেখা খুব কষ্টের। আমি যখন ইনজুরিতে ছিলাম এটা আমার জন্য খুব কষ্টকর ছিলো। আমার সামনে যখন একজন বল করছে সেটি আমি করতে পারছি না এটা মেনে নিতে পারতাম না। কিন্তু ওই সময়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকাটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ ওই পরিস্থিতিতে মানসিক সমস্যাগুলো শুরু হতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। তাই সে সময়ে ভালো একজন বন্ধু থাকা খুব দরকার হয়। এছাড়া সিনিয়র খেলোয়ার ও কোচদের আত্মবিশ্বাস তো অবশ্যই।
চ্যানেল আই অনলাইন: সে সময়ে ইনজুরির প্রতিশব্দ অধিনায়ক মাশিরাফি বিন মতুর্জার সাপোর্ট কতোটুকু পেয়েছেন?
তাসকিন: হ্যাঁ, মাশরাফি ভাই তো অনেক সাপোর্ট দেয়। সে শুধু ভালো খেলোয়াড় নয় তিনি একজন ভালো মানুষও। শুধু আমাকে নয় সব খেলোয়াড়দের চেষ্টা করে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়ার। আর আমি খেলার আগ থেকেই তার অনেক ভক্ত ছিলাম। তাই আমি খুব সৌভাগ্যবান তার নেতৃত্বে খেলতে পারছি ন্যাশনাল টিমে। এছাড়া আমার বাবা-মায়ের খুব কাছের মানুষ তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইন: বাবা প্রসঙ্গ আসলো কিছু বলুন?
তাসকিন: খেলাধুলার শুরু থেকেই বাবা আমাকে অনেক সাপোর্ট করছে। এবং দিনশেষে যখন বাবার সঙ্গে রাতে খেতে বসি তখন খেলা বিষয়ক আলাপ বেশি হয়। সে আমার কোচ না তারপরও জিজ্ঞেস করবে বাবা বোলিংটা কেমন হয়েছিলো। আর বাবা খুব পছন্দ করে বোল্ড উইকেটগুলো। দেখা গেলো আমি একদিন ভালো বল করেছি তাও বাবা বলবে ভালো করেছো কিন্তু মনটা ভরিনি। কারণ আজকে তুমি বোল্ট করো নাই।
শুধু ক্রিকেট নয় সব ব্যাপারে বাবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করি আমি। এবং সেও আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাহলে মা কোন ধরনের উইকেট পছন্দ করে?
তাসকিন: মা পছন্দ করে পেস অ্যাটাক। মা চায় আমি খুব জোরে বল করবো। তাই সবসময় বলে আব্বু তুমি জোড়ে বল করে সব উড়িয়ে দিবে।