বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জটিল বিধি ও আইনের ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অংকের কর দেয়ার দায়ভার সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে।
ফলে জিডিপির তুলনায় প্রয়োজনীয় কর আদায়ে পিছিয়ে পড়ছে দেশ। জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় বাড়াতে পারছে না সরকার।
রোববার ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে ‘সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা: দায়িত্বপূর্ণ কর্পোরেট কর ব্যবস্থা’ নিয়ে বাংলাদেশে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর বিষয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরোনো আইন-নীতি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার অভাবে বাংলাদেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কর দেয়ার ভালো প্রবণতা তৈরি হয়নি।
যে কারণে বাংলাদেশ এখনো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১১ ভাগের বেশি কর আদায় করতে পারছে না। যেটা হওয়া উচিৎ জিডিপির ১৬ ভাগ।
অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল, ক্রিশ্চিয়ান এইড এবং অক্সফাম দায়িত্বপূর্ণ কর্পোরেট কর ব্যবস্থা নিয়ে করা প্রতিবেদনটি মূলত দায়িত্বপূর্ণ কর ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্থায়ন এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর দেয়ার মানবিকতা ও করণীয় নিয়ে করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে এখনো শিশু মৃত্যুর হার ৩৩ শতাংশ। এখনো বাংলাদেশে একজন শিশু গড়ে মাত্র ৫.১ বছর স্কুলে যায়। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পায় মাত্র ৩৭.৮ ভাগ মানুষ। বাংলাদেশে এখনো লিঙ্গভিত্তিক সাম্য অর্জিত হয়নি। পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেকাংশেই কম স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। নারীর মাথাপিছু জাতীয় প্রকৃত আয় পুরুষদের অর্ধেকের কিছুটা বেশি এবং শ্রমক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৫৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষের ৮৪ শতাংশ।
নাগরিক সুবিধাবাড়াতে করের আওতা বাড়াতে হবে। সেজন্য নতুন নিয়ম নীতি প্রয়োজন বলেই মনে করেন অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনালের এডভোকেসি এডভাইজার ইয়ান লিভিংস্টন।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবসা এক দেশে। তারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করে। তার আয় নিয়ে যায় তার মূল প্রতিষ্ঠানের দেশে এই কথা বলে যে, তারা আয়ের কর অন্য দেশে দিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো।
অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান দেশীয় আইন, বিদেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জোরের কারণে, যে কর দেয়া উচিৎ, তা দেয় না। ফলে এ দেশের আয় চলে যায় অন্য দেশে। এজন্য আমাদের ট্যাক্স ন্যায্যতা তৈরি করতে হবে। যুগোপোযোগী করতে হবে কর আইনগুলোকে। আমরা এখনো ১৯২৪ সালের আয়কর আইন দিয়ে চলছি। সেটারও সংস্কার দরকার।
অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা গরীব দেশ ছিলাম, তাই বিদেশী বড় প্রতিষ্ঠান, কোম্পানীগুলো এদেশে বিনিয়োগ করতে ডেকে আনতে হয়েছে। সুযোগ পেয়ে তারা কর সুবিধা নিচ্ছে। এখন ফাক ফোঁকর খুঁজে বের করতে হবে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি ঠেকতে ৮টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে রয়েছে কর বিষয়ে- সুষ্ঠু কর পরিকল্পনার চর্চা; জনগণের প্রতি সচ্ছতা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন; কর্তৃপক্ষের কাজে জবাবদিহিতা; কর আরোপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের উন্নয়ন, সুষ্ঠু কর ব্যবস্থাপনা ও অনুশাসন; কর নীতির পর্যালোচনা; কর সম্পর্কিত প্রভাবন এবং কর প্রণোদনা।