চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি মিয়ানমারের তৈরি ‘প্লট’

চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনার পরিস্থিতিকে মিয়ানমারের তৈরি করা এক ধরনের ‘প্লট’ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই প্লট মিয়ানমার তৈরি করছে রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, উসকানিমূলক আচরণ তো মিয়ানমার শুরু থেকেই করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করেছে তারাই। বাংলাদেশের জন্যও খারাপ অবস্থা তৈরি করছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের জন্য ভীতির পরিবেশ তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করা মিয়ানমারের পরিকল্পিত উল্লেখ করে এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কিছু আলোচনা চলছিল। তালিকা তৈরি করা হয়েছে, এখন এই অগ্রগতির বিষয়টাকে কীভাবে প্রলম্বিত করা যায় সেই চেষ্টাই করছে মিয়ানমার।

‘তারা প্রত্যাবাসনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিতে চায়। তারা রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি তো পুড়িয়েছেই, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়েও দিয়েছে। রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গামুক্ত করার প্রবণতা রয়েছে মিয়ানমারের মধ্যে।  রোহিঙ্গাদেরকে একটু ভীতির সম্পর্কে নিয়ে গিয়ে বিষয়টা ভিন্ন খাতে নিতে চাইছে মিয়ানমার। মিয়ানমার ভাবছে বাংলাদেশ যদি আরেকটু উত্তেজিত হয়ে যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সাংঘর্ষিক হয়ে গেলে রোহিঙ্গা ইস্যু পুরোপুরি চাপা পড়ে যাবে।

তিনি বলেন: এখন যখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা আলোচনা চলছে তখনো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেই আরো ভেসে আসছে।  রোহিঙ্গারা যেন নো ম্যানস ল্যান্ডে না থেকে বাংলাদেশে চলে আসে সেই চেষ্টাও করছে তারা।

দেলোয়ার হোসেন

সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের আরো বেশি সহযোগিতার কথা বলেন তিনি।

‘বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করছে, পতাকা বৈঠক করছে।  সেসব আরো বেশি করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করার বিষয়ে মিয়ানমারের আচরণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে আরো বেশি বেশি। মিয়ানমারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আরেকটু কঠোর অবস্থানে যাওয়া উচিত। মিয়ানমার এখানে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করছে। তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সমস্যা সমাধানে সহজ কোনো উপায় নেই, কূটনৈতিক যে জায়গা রয়েছে, সেই জায়গাকে আরো সচল রাখতে হবে।

ভারত ও চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন: সরকারের যা করা উচিত তা সরকার করছে। বাংলাদেশ তো আর মিয়ানমারকে আক্রমণ করবে না বা করতে চাইবে না। মিয়ানমার স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশকে উসকানি দিচ্ছে।

আশেকা ইরশাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়টা রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু না। এ লক্ষ্যেই মিয়ানমারের পক্ষ থেকে গত কিছুদিনের উত্তেজনা, এর উদ্দেশ্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করা।

‘এর আগেও যতবার আলাপ আলোচনা হয়েছে তারা বলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তারা তৈরি, কিন্তু বাস্তবায়নের সময় এলে তারা কোনো না প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। যাতে নো ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা সরে যায় ও রোহিঙ্গা আলোচনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় সেই চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এরকম অবস্থা থাকলে কোনো রোহিঙ্গা তো আর স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাইবে না।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সমস্যা তৈরি হয়েছে, কিন্তু বাণিজ্য বিষয়ে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। তারা পতাকা বৈঠকে রাজি হয়েছে সেটা একটা ভালো বিষয়। যতোটা কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করতে পারি, বাংলাদেশ যত জোট গঠন করে নিজেদের পাল্লা ভারী করতে পারবে ততোই সহজ হবে সমস্যার সমাধান।

‘চীন ও ভারতের সহযোগিতা অর্জন করাও প্রয়োজন এক্ষেত্রে।’