দেশের শীর্ষ মোবাইল কোম্পানির একজন কর্মকর্তা এবং তার এক সহযোগী অবৈধভাবে সিম বিক্রির সঙ্গে জড়িত। অন্যের নামে নিবন্ধিত একেকটি সিম পাঁচ’শ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন তারা।
এই চক্রের কাছ থেকে কেনা সিম ব্যবহার করা হতো অপরাধমূলক কাজে। সম্প্রতি এমন একটি সিম দিয়ে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে মামুন পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন করে ১০ কোটি টাকা দাবি করে।
গত ১৯ সেপ্টম্বর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে ওই বিদেশি নাগরিক রাজধানীর ভাসানটেক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব-৪ গোয়েন্দারা খুঁজে পায় ওই চক্রটির। র্যাব জানতে পারে মামুন নামের ওই ব্যক্তির সিমটি মাইক্রোকডেস ইনফরমেশন নামে একটি কোম্পানির নামে নিবন্ধন করা।
শনিবার দিবাগত রাতে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে চলন্তিকা মোড়ের একটি বাসা থেকে মোনাডিক বাংলাদেশ নামের একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের মালিক তৌফিক হোসেন পলাশ (৩৮) এবং সিম ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের তদারকির দায়িত্বে থাকা গ্রামীণ ফোনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (বিজনেস সেলস) সৈয়দ তানভীরুল রহমানকে (৩৫) আটক করে র্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে অবৈধ ৫৫৩টি সিম, অবৈধ বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশনের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ও ৯টি ট্যাব জব্দ করা হয়।
রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র্যাব -৪ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর।
তিনি বলেন, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর সিম এক ব্যক্তির নামে বায়োমেট্রিক করে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির সিমগুলো প্রযোজনের বাহিরে তৌফিক হোসেন তা কোম্পানির নামে ইস্যু করত, পরে তা তানভীরুল ইসলাম ছাড়পত্রের মাধ্যমে এ্যাকটিভিশন করাত।
মঞ্জুরুল কবীর বলেন, আমরা ৪২টি কোম্পানির ৮৬৭টি ইস্যু করা সিম তৌফিকের অফিস থেকে জব্দ করি। যা ওইসব কোম্পানির অনুমতি ছাড়াই এ্যাকটিভ করা হয় যা তৌফিকের মালিকানাধীন মোনাডিক বাংলাদেশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের সহায়তায় গ্রামীণ ফোনের প্রতিনিধি তানভীরুল রহমানের তত্ত্বাবধানে এ্যাকটিভ করা হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি মঞ্জুরুল আরো বলেন, আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বিভিন্ন কোম্পানির অনুমতি না নিয়ে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধন করে রাখে। পরে তা সাধারণের কাছে সিমগুলো পাঁচ’শ থেকে এক হাজার টাকা। আর যদি তারা বুঝতে পারত সিমের ক্রেতারা কোন অপরাধমূলক কাজে (অবৈধ হুমকি, চাঁদাবাজি ও ভিওআইপি ব্যবসা) ব্যবহার করবে তাহলে ক্রেতাদের কাছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো।
‘‘মূলত আর্থিকভাবে লাভবান হবার জন্যই তারা এ কাজগুলো করে থাকত।’’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে গ্রামীণ ফোনের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা আমরা পেয়েছি।
‘‘আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবসা প্রক্রিয়াধীন। রোববারই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন হলে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করব।’’