জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম থেকে-
মুনিম শাহরিয়ার ও নাঈম শেখ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ব্যাটিংয়ে নামার, জেমি সিডন্স তখন স্টেডিয়ামের এক কোণে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন। সংবাদ সম্মেলন যেন দীর্ঘ না হয় সাংবাদিকদের সে অনুরোধ জানান ম্যানেজার নাফিস ইকবাল। মুনিম-নাঈম ততক্ষণে নেটে বল খেলার জন্য তৈরি। তাদের ব্যাটিংটা দেখা জরুরি সিডন্সের। নাফিসের কথা মতোই নতুন ব্যাটিং কোচকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে শেষ করা হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলতি সিরিজে ওয়ানডে দলের সবাইকে পরখ করেছেন সিডন্স। ওয়ানডের বাইরে শুধুমাত্র টি-টুয়েন্টি দলে থাকা চার ক্রিকেটারকে (মুনিম, নাঈম মেহেদী, শহিদুল) আজই প্রথম দেখলেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ।
নেটের পেছনে হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও সিডন্স দাঁড়ালেন পাশাপাশি। নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। একজন নেট বোলারের সঙ্গে শেখ মেহেদী, শহিদুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন।
দুপুর আড়াইটায় শুরু হলো প্রস্তুতি। তপ্ত রোদে জ্বলে উঠল মুনিমের ব্যাট। অফস্পিনার মেহেদীকে কাভারের ওপর দিয়ে ইন সাইড আউট শট খেলে শুরু করলেন। জাতীয় দলের নেটে প্রথমবার নেমেই সাজালেন বাহারি শটের পসরা।
নাঈম টি-টুয়েন্টি দলের নিয়মিত ওপেনার। তবে মুনিম বিপিএল মাতিয়ে এবারই প্রথম জাতীয় দলে। ডমিঙ্গোরও প্রথম দেখা ফরচুন বরিশালের ওপেনারকে। কবজির জোর ও দারুণ টাইমিংয়ে দুই কোচকে চমকে দেন মুনিম। যেভাবে বিপিএলে আগ্রাসী ব্যাটিং করে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে।
ইবাদত হোসেন ও শহিদুল ইসলামের বল একটু শট পেলেই শরীর ঘুরিয়ে করেছেন পুল। নেট পেরিয়ে বার বার বলের ঠিকানা হচ্ছিল সীমানার শেষ প্রান্ত। স্ট্রেইট শটের সবই লাগছিল ব্যাটের সুইট পার্টে।
পূর্ব পাশের অর্ধেক মাঠ ফাঁকা রেখে হয়েছে অনুশীলন। মুনিমের স্লগ সুইপ, পুল শটে নেট পেরিয়ে মিড স্কয়ার লেগ, ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বল বারবার বেরোতে থাকবে তা হয়ত ভাবনায় ছিল না কারোরই। সেখানটায় ফিল্ডার রাখার ছিল না প্রস্তুতি।
ইবাদতের একটু খাটো লেংথের বল পুল করে পূর্ব গ্যালারির বাউন্ডার সীমানায় পাঠান মুনিম। মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে সিডন্স বল কুড়িয়ে নিয়ে আসেন। একটু পরই খেলেন স্লগ সুইপ। দৌড়ে সীমানার কাছ থেকে বল নিয়ে আসেন ডমিঙ্গো। দুই কোচের বল আনার জন্য ছোটাছুটি অবশ্য ক্লান্তিকর ছিল না। তারা কতটা উপভোগ করছিলেন ব্যাটিং, সেটি বোঝা গেছে শারিরীক ভাষাতে।
পরে বিশাল এক ছক্কায় বলই হারিয়ে ফেলেন। ইবাদতের বাউন্সারে পুল করে গ্যালারিতে পাঠান মুনিম। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য অনেক খোঁজার পরও চেয়ারের নিচ থেকে বল উদ্ধার করতে পারেননি। মুনিশ ‘শো’ চলেছে ৩০ বলের মতো। তাতে যে বাউন্ডারি এসেছে তা গননা করলেই পেরিয়ে যাবে ফিফটি!
তবে হতাশ করেছেন নাঈম। নেট সেশনের শুরুর অর্ধেকটা সময় বাউন্ডারি মারার মতো কোনো শট খেলতে পারেননি। ওভার শেষে প্রান্ত বদল হতেই চোখে ধরা পড়েছে বিপরীত দুই ছবি। পরে ডমিঙ্গো এ বাঁহাতি ওপেনারকে কিছুক্ষণের জন্য থামান। টেকনিকে যে গড়বড় হচ্ছে সেটি বুঝিয়ে দেন। শেষের দিকে কিছু বল ভালো টাইমিংয়ে উড়িয়ে মারতে পেরেছেন বাংলাদেশের হয়ে ৩২টি টি-টুয়েন্টি খেলে ফেলা নাঈম।।
মুনিমের কাছে যেতেই হয়নি কোচদের। কেবল উপভোগই করে গেছেন তারা। মুনিম যে টেকনিকে শট খেলছিলেন সেটি আবার থ্রোয়ার স্টিক হাতে শ্যাডো করে নিজেকেই দেখাচ্ছিলেন সিডন্স। হতে পারে তা মুনিমে মুগ্ধতার প্রতীকী ছবি!