চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর মৃত্যু

বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ডেপুটি স্পিকার এবং আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সহঅভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শওকত আলী ৮৩ বছর বয়সে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

ঢাকা সিএমএইচে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন শওকত আলী।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জনমানুষের কাছে বরাবর এক প্রিয় নাম শওকত আলী শরীয়তপুর-২ আসন থেকে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৩৭ সালে শরীয়তপুরে জন্ম তার। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরে কমিশন লাভ করেন। পরে তাকে মালি ক্যান্টনমেন্টের অর্ডন্যান্স স্কুলের প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।

সেখানে কর্মরত অবস্থায়ই বিপ্লবী পরিষদের সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে গভীর যোগাযোগ হয় শওকত আলীর। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা আগরতলা মামলায় তাকেও আসামি করা হয়। ১৯৬৮ সালের কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে ১৩ মাস কারাভোগ করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পেলে সেবছরই তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধে প্রথমে মাদারীপুরের কমান্ডার এবং পরে ২ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন শওকত আলী। মুজিবনগরে সশস্ত্রবাহিনী সদরদপ্তরের স্টাফ অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতার নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৭৫’র ১৫ই আগস্ট সপরিবার বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর তাকে অবসরে পাঠানো হয়।

১৯৭৭ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হন শওকত আলী। ৭৯ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পালন করেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের হুইপের দায়িত্ব। এরপর টানা আরও ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

২০০৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার এবং ২০১৩ সালের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে শওকত আলী। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন কর্নেল শওকত আলী। মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন, দায়িত্ব পালন করছিলেন এর চেয়ারম্যান হিসেবে। প্রজন্ম-৭১ এর প্রধান উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলা একাডেমির আজীন সদস্য ছিলেন কর্নেল শওকত।  কয়েকটি অসাধারণ বইয়ের রচয়িতা তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সত্য মামলা আগরতলা’, ‘কারাগারের ডায়েরি’ এবং ‘গণপরিষদ থেকে নবম সংসদ’।

দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২৯শে অক্টোবর তাকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

গণতন্ত্রকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখতে আজীবন কাজ করা কর্নেল শওকত আলীর অবদান সবসময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতি। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি চ্যানেল আইয়ের গভীর শ্রদ্ধা।