যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর এবার সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা ছিলো জাতি। সেই অপেক্ষা অবসান হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বেঞ্চ। একই সঙ্গে তার ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন।
সাকা ও মুজাহিদের রিভিউ শুনানি শেষে আজ (বুধবার) সকালে এ রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আপিল বিভাগ গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।
সাকা চৌধুরী
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হন সাকা চৌধুরী। মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে ৪টি অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
যে ৪টি অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যায় ফাঁসি হয়েছে তা হলো, ৩ নং অভিযোগে গহিরা শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুন চন্দ্র সিংহ হত্যা, ৫ নং অভিযোগে সুলতানপুরে শ্রী নেপাল চন্দ্র ও তিনজনকে হত্যা, ৬নং অভিযোগে ঊনসত্তর পাড়ায় ৬৯/৭০জনকে গণহত্যা এবং ৮নং অভিযোগে চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহমদ ও তার পুত্র আলমগীরকে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো অপরাধের জড়িত থাকা এবং এর পরিকল্পনা করার দায়ে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালের ১৪ আগষ্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে ট্রাইব্যুনাল-১।
আলী আহসান মুজাহিদ
জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নিযার্তনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতটির অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, ১ ও ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ নম্বর অভিযোগের সঙ্গে সমন্বিত করে দু’টি অভিযোগের একসঙ্গে রায় দেওয়া হয়। ১ নম্বর অভিযোগে ছিল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যা ও ৬ নম্বর অভিযোগে ছিল গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয়া, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনা।
প্রথম অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হত্যার ঘটনায়ও তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায় ছিল বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে। ৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার ঘটনা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগ প্রসিকিউশন সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।