বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাড়িতে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি সভায় হামলা করে আওয়ামী লীগ সরকার মহাপাপ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এমন মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রতিদিন সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে বক্তব্য রাখেন। সে জন্য তার বাড়িতে যে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি সভা হয় সেখানে আক্রমণ করে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কি এক ভয়াবহ সমাজে আমরা বাস করছি। পূজা করতে গেলে ভাঙচুর করে, ইফতার মাহফিলে ভাঙচুর করে। রোজাদারদের গ্রেফতার করে। হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা মুসলিম বলে কথা নেই, বিরোধী মত হলেই আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ না করলে কোন মতই এদেশে নিরাপদ থাকছে না। আওয়ামী লীগ না করলে যারা মুসলমান তাদের ইফতার করতে দেয়া হয়না, যারা হিন্দু তাদের পূজা করতে বাধা দেয়া হয়, অসহায়দের ত্রাণ দিতে বাধা দেয়া হয়।’
বিএনপি’র এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘সরকারের চরম অব্যবস্থাপনার ফলে চালের দাম সীমাহীন মাত্রায় বেড়ে গেছে। গরিব মানুষ চাল কিনে খাওয়ার অবস্থায় নেই। এই সরকার এমন কিছু কাজ করছে যেখানে সাধারণ মানুষ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনগণকে গণতন্ত্রহীন অবস্থায় রাখা হয়েছে। দেশের মানুষকে ভোট দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের অধিকার হরণ করা পাপ, আর ধর্মীয় অধিকার হরণ করা মহাপাপ। এই সরকার মহাপাপে পাপী।’
এসময় রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোন রাজনীতি নয়, এটি মানবিক সমস্যা, সবাইকে নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বলেন, এই বিরাট সমস্যার সমাধান এককভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমরা দাবি করছি, বিভিন্ন সংগঠনকে এই সমস্যা সমাধানে সুযোগ দিতে হবে।
রহুল কবির রিজভী তার বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আজ প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। হাহাকার করছে নাফ নদীর তীরে। সারা বিশ্বের মানুষ এটি নিয়ে বিচলিত। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার আছে বিরোধী মত দমনে ব্যাস্ত। আজকের এমন সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাড়িতে হামলার জন্য প্রতিবাদ করতে হচ্ছে আমাদের।
তিনি বলেন, ‘অন্য দেশ এই দেশের আকাশ সীমা অতিক্রম করুক, পানি সীমা লঙ্ঘন করলেও এই সরকার কিছুই বলবে না। আমাদের সীমান্তে প্রতিদিন সার্বভৌমত্ব লংঘিত হচ্ছে। সরকারে কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। অথচ নিজ দেশের বিরোধী মতকে ঠিকই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দমন করার জন্য বেপরোয়াভাবে লেলিয়ে দিতে পারে।’
রিজভী বলেন, ‘বলা হয় উৎসব সার্বজনীন। কিন্তু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দুর্গাপূজার প্রস্তুতিতে হামলা করা হলো! উৎসব আয়োজনে পুলিশ যে হামলা করেছে আর মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করেছে তার কোন পার্থক্য নেই। অং সান সু চির নিরাপত্তা বাহিনী আর শেখ হাসিনার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একই কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সেকুলার দল নয়, পিকিউলিয়ার দল।’
তিনি আরো বলেন, ওদের কাছে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মুসলিম বলে কোন কথা নেই। তাদের কথা হলো এখান থেকে গণতন্ত্র উৎখাত করবে। শেখ হাসিনা বিরোধী মতকে ফিল্ডের সঙ্গে লেভেল করে দিচ্ছে। মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে বিরোধীদের। তাদের ধর্ম একটা্ই যে, জোর করে ক্ষমতায় থাকবে।
এসময় রিজভী হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এদেশে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সার্বিক স্বাধীনতার কথা বলার জন্য একটাই কাজ করতে হবে, আর তাহলো শেখ হাসিনার রাজ সিংহাসনকে মাটিয়ে লুটিয়ে দিতে হবে।’
তিনি সবাইকে সরকার পতন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান খান দুদু প্রমুখ।