কক্সবাজারে শ্রমিক বেশে আত্মগোপনে ছিলেন শতকোটি টাকার প্রতারক মো. ইব্রাহিম আলী (৪২)। গত চার বছরে ১১০টি মামলার পলাতক আসামি তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের ফিশারি ঘাট থেকে শ্রমিক বেশে কাজ করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের একটি বিশেষায়িত দল।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন সংস্থাটির ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ১১০ টি প্রতারণার মামলা আছে। সর্বশেষ লালবাগ (ডিএমপি) থানার মামলা নং-৪১ তে তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
ইব্রাহিম রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মিতা ব্রিক্স, এমএসবি, বিবিএফ নামক ব্রিক ফিল্ডে ইট উৎপাদন শেষে, লভ্যাংশ দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল।
উচ্চ হারে সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে গােদাগাড়ীসহ রাজশাহী বিভাগের শত শত মানুষের কাছে থেকে আনুমানিক নব্বই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
মো.কামরুজ্জামান বলেন, ১১০টি মামলার আসামি ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা, মোবাইল ট্র্যাকিং ছাড়াও বিভিন্ন সহয়তার প্রয়োজন পড়েছে। তিনি চার বছর ধরে পলাতক থাকাকালীন অবস্থায় কখনো একদিনের বেশি একটি সিম ব্যবহার করতেন না। এর আগে আমরা ইব্রাহিমের শ্বশুর, শ্যালক ও ভগ্নিপতিকে গ্রেপ্তার করি। যখন জানতে পারি সে কক্সবাজারে অবস্থান করছে আমাদের টিম বেশ কিছুদিন রেকি করেছে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করতে কক্সবাজার জেলা পুলিশ টিমেরও সহায়তা নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ সালে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের থেকে তার তিনটি ইট ভাটায় বিনিয়োগ করার কথা বলতেন এবং পরে শেয়ারের মাধ্যমে টাকা দিবেন বলে জানাত।
ইট ভাটার একটা সীজন আছে, ইব্রাহিম অফ সীজনে মানুষের কাছে টাকা চাইত। বিনিয়োগকারীরা ভাবতেন সীজনে তারা দ্বিগুণ টাকা ফেরত পাবেন। এছাড়াও প্রতারক ইব্রাহিম ব্যাংকের চাইতে অধিক সুদে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিত। মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি সুদের টাকা সময় মতো নিতে তাগাদা দিতেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বলতেন আমরা সুদআসল সহ টাকা নিব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিত্তিতে কামরুজ্জামান বলেন, প্রতারণার টাকাগুলো দিয়ে সে বেশ কিছু ট্রাক কিনে, কিছু শ্বশুরের কাছে রাখে, গার্মেন্টসের পার্টনার হয়, বেশ কয়েকটি দোকান ও জমি কিনে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য বের হয়ে আসবে।
প্রতারক ইব্রাহিমের ফাঁদে পা দেয়া একজন মো. শহীদুল ইসলাম। লালবাগ থানায় দায়ের করা তার মামলাতেই ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
শহীদুল ইসলাম বলেন, ইট ভাটায় বিনেয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ইব্রাহিম।