আজ স্বৈরাচার পতন দিবস। ১৯৯০ এর এই দিনে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ক্ষমতা হস্তান্তর করেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। সে সময়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার পতনের টানা কর্মসূচির কারণে ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ।
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ক্ষমতা দখলের পর এরশাদ সরকার দেশের রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে গণবিরোধী ধারার প্রবর্তন করেন।
এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন কায়েম করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা ক্ষমতার স্বাদ পেতে যোগ দেন এরশাদের সঙ্গে। নয় বছরের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়।
গণতন্ত্রের ধারা ফিরিয়ে আনতে স্বৈরশাসনের এক বছরের মাথায় এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করে ছাত্র ও যুব সমাজ। ঢাকা পলিটেকনিকের ছাত্র মনিরুজ্জামান হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্রসমাজ। আত্মাহুতি দেন সেলিন, দেলোয়ার, ফাত্তাহ, ডাক্তার মিলন সহ আরো অনেকে।
স্বৈরাচার হঠাও আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয়, বিএনপি’র নেতৃত্বে ৭ দলীয় এবং জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ৫ দলীয় জোট সম্মিলিতভাবে এরশাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয় উঠে ঢাকার রাজপথ। পতন ত্বরান্বিত করতে এক টেবিলে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ’৯০ এর ১০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে সূচনা হয় ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলনের।
১৯৮৭’র ১০ নভেম্বর হরতাল চলাকালে জিপিও’র সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় নূর হোসেনকে। যার বুকে পিঠে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক। সেনা ও পুলিশ বাহিনী মিলে আমিনুল হুদা টিটোকে হত্যা করে গুম করে।
এই ঘটনায় গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এরশাদ হঠানোর আন্দোলনে নামে। ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ নয় বছর পর ৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে একচ্ছত্র শাসনের ইতি টানেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।