ইসরাইলের বিমান হামলায় লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর অন্যতম শীর্ষ নেতা সামির কান্তার নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের মুখে পড়েছে ইসলাইল। রোববার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটে একটি ভবনে বিমান হামলা চালিয়ে এই কমান্ডারকে ইসরাইল হত্যা করেছে বলে দাবি হিজবুল্লাহ’র। ওই হামলায় আরো আট জন নিহত হয়।
সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের কাছেই জারামানা নামক স্থানে একটি ভবনে সামির কান্তার তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়ে বাস করতেন।
কান্তারের জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের বিশাল জনসভায় নেতা হত্যার প্রতিশোধের ঘোষণা দেন হিজবুল্লাহর প্রধান সাঈদ হাসান নাসরুল্লাহ। সামরিক পোশাক পড়া হাজার হাজার হিজবু্ল্লাহ যোদ্ধা কান্তারের কফিন বহনকালে ‘ইসরাইলের মুত্যু’ স্লোগান দেয়। এসময় তারা হিজবু্ল্লাহর হলুদ পতাকা বহন করে।
হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-মানারে সরাসরি প্রচারিত জনসভায় নাসরুল্লাহ বলেন, ‘সামির কান্তারকে যে ইসরাইলই হত্যা করেছে এই ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলাও অবান্তর।’
তিনি বলেন, ‘সামির আমাদের অন্যতম একজন নেতা। তার মৃত্যর প্রতিশোধ আমাদের নিতেই হবে। এটা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায়, যেকোনোভাবেই হতে পারে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আর সবাইকে এই কথা মনে রাখতে হবে।’
শুরুতে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সদস্য ছিলেন কান্তার। চার ইসরাইলিকে হত্যার অভিযোগে ১৯৭৯ সালে ৩০ বছরের জেল হয় তার। ২৯ বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে কান্তারকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তারা। মুক্তির পর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে কান্তারের নায়কের মত অভ্যর্থনা জানানো হয়। ওই বছরই হিজবুল্লাহ গ্রুপে যোগ দেন তিনি।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ কান্তারের মৃত্যুতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছে, কান্তার সিরিয়ায় অবস্থিত ইসরায়েলি সেনাদের উপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে ওই বিমান হামলার দায় তাদের কিনা সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি।
ইসরায়েলের গৃহায়ণ ও নির্মাণ মন্ত্রী ইওয়াভ গালান্ত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত করেও কিছু বলতে পারছি না, আবার অস্বীকারও করতে পারছি না। সমির কান্তার মতোত মানুষ পৃথিবীতে না থাকলে ভালই হয়।’
কান্তার নিহত হওয়া কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইরানও। কান্তারের রক্তের ‘বদলা’ চেয়েছে দেশটির সংসদ। ২০০’র বেশি সংসদ সদস্য সামির কান্তারের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহকে সমবেদনা জানান।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন জাবেরি আনসারি সামির কান্তার হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি হচ্ছে ইসরাইলের রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের চরম বহিঃপ্রকাশ এবং এটি তাদের প্রবণতায় পরিণত হয়েছে।
১৯৬২ সালে সাধারণ পরিবারে জন্ম কান্তারের। তবে ইসরাইল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্বের কাছে ব্যাপক পরিচিত পান তিনি। চলমান সিরিয়া সংকটে কান্তারের কি ভূমিকা ছিলো সেটা পষ্ট করে জানায়নি হিজবুল্লাহ। সিরিয় প্রেসিডেন্ট আসাদকে রক্ষায় ইরানি সাহায্য সহযোগিতায় যুদ্ধ করছে গ্রুপটি।
তবে সিরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইসরাইল অধিকৃত সিরিয়ার গোলান অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন কান্তার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গোলানে ইসরাইলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর সামরিক কমান্ডার ইমাদ মুগিয়াহ সহ চারজন সদস্য নিহত হয়।
সোমবার দাফনের আগে কান্তারের কফিন ইমাদের কবরের সামনে কিছুক্ষণ রাখা হয়। এসময় হিজবু্ল্লাহ সদস্যরা দুই নেতার মৃত্যুর ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার শপথ নেয়।
শপথ নেওয়ার সময় হিজবুল্লাহর সিনিয়র কর্মকর্তা হাশেম সাফিদিন বলেন, ‘ইসরাইল যদি মনে করে কান্তারকে হত্যা করে হিজবু্ল্লাহ রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করবে। কারণ তারা আমাদের শক্তি এবং সার্মথ সম্পর্কে জানে এবং সেটা দেখবেও।’