চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শিশু সন্তান নিয়ে দেশত্যাগ: বাবার বিরুদ্ধে রুল, দাদাকে হাইকোর্টে তলব

বাবার পাসপোর্ট স্থগিত, মায়েরটা ফেরতের নির্দেশ

আদালতের আদেশ অমান্য করে শিশু সন্তানকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করায় বাবা সানিউর নবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সেই সাথে সানিউর নবীর বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং সানিউরের অবস্থান আদালতকে জানাতে তার আইনজীবীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে শিশুটির মা ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আর সানিউর নবীকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জিডি করার বিষয়ে এবং আদালত নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেয়ায় সানিউরের বাবা ও শিশুটির দাদা টিআইএম নবীকে ব্যখ্যা দিতে আগামী ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। সেই সাথে তার দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

শিশুটির মা ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাদের সাথে ছিলেন আইনজীবী ফেরজা পারভিন, কাজী মারুফুল আলম ও ফাইজা মেহরিন। অপর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

২০১৭ সালে ভারতের হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ বিয়ে করেন ঢাকার সানিউর টি আই এম নবীকে। এদের ঘরে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। একপর্যায়ে ঢাকায় অবস্থান করা এই দম্পতির সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এসময় সাদিকাকে নির্যাতন ও তার আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে না দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এবিষয়টি সাদিকার আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পেরে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন “ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে”র (ফ্লাড) সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর গত ৮ আগস্ট সাদিকা ও তার শিশু সন্তানকে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী। এই রিটের প্রেক্ষাপটেই সানিউর টি আই এম নবী সাদিকাকে ডিভোর্স দেন।

এদিকে হাইকোর্ট রিটের শুনানি নিয়ে সাদিকা ও তার শিশু সন্তানকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী এরা আদালতে হাজির হলে হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে তার মায়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে বাবাকে সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়া হয়। সেই সাথে দুই মাস সাদিকার পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়। হাইকোর্টের এই আদেশের পর শিশুটির বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ী গুলশান ক্লাবে সাদিকা ও শিশুটি অবস্থান করছিলেন। তবে একপর্যায়ে শিশুটির নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে থানায় জিডি করেন বাবা সানিউর। পরবর্তীতে তিনি একদিন ওই শিশুকে নিয়ে গিয়ে আর মায়ের কাছে দিয়ে যাননি। এবিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত ১৬ নভেম্বর সকালের মধ্যে মায়ের আইনজীবীর কাছে শিশুটিকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। তবে শিশুর বাবা মায়ের আইনজীবীর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেননি। পরবর্তীতে সাদিকার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবা সানিউরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। এরপর সানিউরকে তার শিশুসহ ২১ নভেম্বর বিকেল ৩টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানার পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয় যে, সানিউর তার শিশু সন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন। অন্যদিকে সানিউরের বাবা টিআইএম নবী তার ছেলেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে থানায় জিডি করেন। এছাড়া তিনি এবিষয়ে ফেসবুকে অশালীন পোস্ট করেন বলে হাইকোর্টকে বলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।