ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ সম্প্রতি জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ হতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত তিনি জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক ছিলেন।
ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লি. ইসিআরএল এর একজন উদ্যোক্তা পরিচালক এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টস অব বাংলাদেশ, আইসিএবি এর সভাপতি এবং সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব একাউন্টস এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। পেশাগতভাবে তিনি একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এবং ১৯৯০ সাল হতে আইসিএবির ফেলো সদস্য ।
১৯৯৬ সালে তিনি কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিফ বিজনেস স্কুল থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ হতে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বাংলাদেশের আর্থিক খাত নিয়ে কাজ করার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসহ অর্থনীতি ও আর্থিক খাত বিষয়ে তার ৫০ টির অধিক গবেষণাপত্র এবং প্রকাশনা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, এনার্জি কোম্পানী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অডিট এনগেজমেন্ট পার্টনার এবং অনেক দেশী ও বহুজাতিক কোম্পানীর কর উপদেষ্টা। তিনি গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড ও অডিট কমিটির উপদেষ্টা ছাড়াও ঢাকা ওয়াসার পর্ষদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লি, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এর কনসালটেটিভ কমিটি এবং বিটিসিএল এ আইসিএবি এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। সম্প্রতি দেশের আর্থিক খাতের নানা প্রসঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন: প্রাইভেট ব্যাংকগুলো স্মার্ট কোর ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে কিন্তু রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে- কেন?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: এই প্রশ্নটা এখনকার সময়ে রিলেভেন্ট কিন্তু দুই ধরণের ব্যাংকের ওয়ে অব ওয়ার্কিং ইজ ডিফরেন্ট এন্ড এজেন্ডা ইজ অলসো ডিফরেন্ট।
প্রশ্ন: কিন্তু মূল টার্গেট তো এক?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: ধরুন- একটা প্রাইভেট ব্যাংকের ব্র্রাঞ্চ কতোগুলো? হাউ মাচ ব্রাঞ্চেজ দে অ্যাভ? ভেরি স্মল। ব্যাংক হিসেবে টোটাল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমে তারা পার্ট কতোটা? ভেরি স্মল। ইফ ইউ টক অ্যাবাউট দ্যা ন্যাশনালাইজড ব্যাংক? তাদের ভুমিকা অনেক বড়।
প্রশ্ন: বড় তো হবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ফার্স্ট জেনারেশন ব্যাংক?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকগুলোর কমার্শিয়াল ফাংশনগুলোকে আলাদা করে দেখতে হবে। কোর ব্যাংকিং এর যে কথা প্রাইভেট ব্যাংকগুলো বলছে। দে আর ডিলিং উইথ এ ভেরি স্মল নাম্বার্স অব কাস্টমারস। কিন্তু রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের কাজ অনেক বড়। দেশে কোন বড় সাইক্লোন হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই লোন দিচ্ছে কিন্তু কোন প্রাইভেট ব্যাংক লোন দিচ্ছে না। রুরাল এরিয়াতে ব্র্যাঞ্চ খুলতে প্রাইভেট ব্যাংক চায় না কিন্তু রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক ব্র্যাঞ্চ খুলছে গ্রামে।
প্রশ্ন: কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে প্রাইভেট ব্যাংক তো সার্ভিস দিচ্ছে।
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: আরও শোনেন- কমার্শিয়াল সাইড থেকে ডিপোজিট নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত রেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ডিপোজিট নেয়। এর থেকে তারা ভায়োলেশন করতে পারবে না। লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে- দে আর রেসট্রিকটেড টু গভর্নমেন্ট রিকোয়ারমেন্ট।
প্রশ্ন: সরকারের নির্দেশনা বেশি মানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ১৫-১৬ পারসেন্ট ইন্টারেস্ট নেয়। আর সরকার বলছে নয় পারসেন্ট। বাট গভর্নমেন্ট ব্যাংক দে আর নট ডুয়িং দ্যাট। ইন দ্যাট কেস, পাবলিক ইন্টারেস্ট যে সমস্ত যেমন, পেট্রোবাংলার কোন এলসি প্রাইভেট ব্যাংক খোলে না। পেট্রোলিয়াম আমদানী করছে তারা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ামের উপরে নির্ভরশীল সেখানে তারা কোন এলসি খোলে না। লোকাল ব্যাংকগুলো পেট্রোবাংলার এলসি খুলতে ৪০ পয়সা নেয়। এখানে পার্থক্য আগে বুঝতে হবে। সোশ্যাল সিকিউরিটি সার্ভিস সরকারি ব্যাংকগুলো যেভাবে প্রভাইড করছে টু দ্য পিপল। রেমিটেন্সের টাকা যেভাবে আনছে এটা কিন্তু কমার্শিয়ালি না? এখানে সরকারি ব্যাংক অনেকটা সাবসিডি দিয়ে কাজ করছে। ফুড ইম্পোর্টের ক্ষেত্রেও প্রাইভেট ব্যাংক কোন এলসি খোলে না।সুনামগঞ্জে যখন খাদ্য সংকট দেখা দিলো তখন কিন্তু প্রাইভেট ব্যাংক খাদ্য আমদানী করে নাই।
প্রশ্ন: মানুষের যে প্রত্যাশা আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যেভাবে কাজ করছে। এই জায়গায় যে গ্যাপ?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: আই এগ্রি উইথ ইউ। ওই ডেলিভারি তারা দিতে পারছে না।
প্রশ্ন: কেন? রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক তো গ্রামেও কাজ করছে। তাহলে তারা পারছে না কেন সার্ভিস দিতে?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: পারছে না তার কারণ- স্টেট ওন এন্টারপ্রাইজ যেগুলো লুজিং তাদেরকে এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই লোন দিচ্ছে। কোন প্রাইভেট ব্যাংক তো দিচ্ছে না। রেমিটেন্সের টাকা দেশে আনতে অনেকটা ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এই জায়গায়- প্রাইভেট ব্যাংক উইল নট ডু দ্যাট। এখানেই পার্থক্য।
প্রশ্ন: সেন্ট্রাল ব্যাংক তো মনিটরিং করছে
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: সেন্ট্রাল ব্যাংক মনিটরিং করছে কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ওইভাবেই তৈরী করা হয়েছে যে, ওয়েল ফেয়ার বাট নট প্রফিট। এই অ্যাটিচিউডের কারণে অনেক কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক করতে পারে না। দুইটাকে এক সাথে তুলনা করতে পারবেন না। বাট হোয়েন এভার ইউ ডু কম্প্যারিজন ফ্রম এ ওয়ান লেভেল।
প্রশ্ন: অবশ্যই সেবা দিয়ে মানুষের প্রত্যাশার জায়গা পূরণ করতে হবে?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: যেমন, কৃষি ব্যাংক যেভাবে কৃষিতে লোন দিচ্ছে ওইভাবে কোন প্রাইভেট ব্যাংক কি লোন দেয়? না, তারা কৃষি ব্যাংকের মত ওইভাবে লোন দেয় না।
প্রশ্ন: আমাদের বিজনেস ভলিউম এবং অর্থনীতির সাইজ অনুসারে- ব্যাংকের মার্জার বা অ্যাকুইজিশনের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ: এটি খুবই জরুরী ইস্যু। এখন বাংলাদেশে ৬০টি ব্যাংক আছে- অনেকে বলছেন এতো ব্যাংকের দরকার কী? ইনটার্মস দ্য সাইজ অব দ্য ইকোনমি- হাউ ম্যানি ব্যাংক শুড বি দেয়ার? কতোগুলো লিজিং কোম্পানী, কতোগুলো ইন্স্যুরেন্স থাকা উচিত? ইউনিভার্সিটিও ১৮০টার মত আছে। কতোটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি থাকা উচিৎ আর কতোগুলো প্রাইভেট থাকা উচিৎ? এডুকেশন সিস্টেমে হয়তো- দ্যাট ইজ ওকে। বাট ব্যাংকিং সিস্টেমে যদি লেজার নাম্বার অব ব্যাংক থাকে তাহলে সেখানে কী হবে? সেখানে একজনের ডিপোজিট আরেকজন নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: আন হেলদী কম্পিটিশন তৈরী হবে?
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ: কস্ট অব ফান্ড বাড়বে। ধরেন, একজনের ব্যাংকে টাকা রাখলেন। অন্য ব্যাংক বললো ভাই আমি ইন্টারেস্ট রেট আরও বেশি দেবো আমার ব্যাংকে ওই টাকা নিয়ে এসে রাখেন। এইভাবে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড বাড়ছে। ব্যাংকের লো কস্ট ডিপোজিট হলে রেট অব ইন্টারেস্ট কমে। ব্যাংক বেশি হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট কমছে না। এছাড়া আন ব্যাংকড পপুলেশনকে ব্যাংকিং মিস্টেমে আনতে পারলেও এই রেট কমে। ইন দ্যাট কেস অ্যাট দ্য সেম টাইম এখন আমাদের ৩৫-৪০টার মতো লিজিং কোম্পানী আছে। এদের সবার সাকসেস স্টোরী নাই। ইডকল এতো বড় কোম্পানী তাদেরকে রেজিস্ট্রেশন কিভাবে আছে? ইট শ্যুড বি এ ডেভলপমেন্ট ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন লাইক শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থা। এটি এখনো হয় নাই।
আমি মনে করি যে, শিল্প ব্যাংক, শিল্প ঋণ সংস্থা ও ইডকল’কে এক জায়গায় মার্জ করে লং টার্ম ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনে পরিণত করা উচিৎ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এই রকম ধারণা এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে- কেডাব্লিউএইচ যার উদাহরণ। ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ড, সাউথ কোরিয়া, জাপান ও তাইওয়ানে হয়েছে। এমনকি আমাদের বাংলাদেশেও হয়েছে- শিল্প ব্যাংক এবং শিল্প ঋণ সংস্থা। এর রিজাল্ট কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় হয়েছে। ছোট ছোটি লিজিং কোম্পানীগুলোতে হাইয়েস্ট ইন্টারেস্ট রেট। তারা টাকা দিতে পারছে না। সো মার্জার ইজ এসেনশিয়াল ইন বাংলাদেশ। আমাদের এখানে পার ক্যাপিটা ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। এর সংখ্যা তাই কমাতে হবে। কমিয়ে স্পেশালাইজড ব্যাংক করতে হবে। যেমন, কৃষি ব্যাংক। একটি মাত্র ব্যাংক কৃষিতে কাজ করছে। তারা একা। প্রাইভেট সেক্টরেও কৃষি ব্যাংক দরকার।