মধ্যযুগীয় কায়দায় শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় সৌদি আরবের সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের মিল দেখতে পাচ্ছে বিশ্ব। এই মিলের মূলে রয়েছে কঠোর শরিয়া আইন।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী শরিয়া আইন বাস্তবায়নের বেলায় সৌদি ও আইএসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং এই আধুনিক সময়েও সৌদি আরব ও জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস একের পর এক শিরশ্ছেদের মাধ্যমে বর্বরতার দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে।
সেই ধারাবাহিকতায় শিয়া নেতা শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বর্বরতার সর্বশেষ নজির স্থাপন করলো সৌদি আরব।
নিমরসহ একদিনেই ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটি। এদের মধ্যে অনেককেই হাটু গেড়ে বসিয়ে গলায় তলোয়ার চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
শেখ নিমরের মৃত্যুণ্ড কার্যকরের কড়া সমালোচনা করে সৌদির সঙ্গে জঙ্গি আইএসের তুলনা করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সৌদি আরবের সঙ্গে আইএসের বর্বরতার মিল দেখিয়ে তার ওয়েবসাইটে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। সেখানে সৌদি ও আইএসের শিরশ্ছেদের চিত্র তুলে ধরে প্রশ্ন করা হয়েছে, “পার্থক্য কোথায়?”
এই পোস্টকে পুঁজি করেই কেউ সামাজিক মাধ্যমে সৌদির সঙ্গে আইএসের তুলনা করলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি আরব। তবে সমালোচনা থেমে নেই।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদের জন্য কুখ্যাতি পেয়েছে আইএস। অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে জঙ্গি গোষ্ঠীর বর্বরতায় হতবাক পুরো বিশ্ব। তবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে সৌদি আরব উগ্র সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়েছে।’
অথচ বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের সংখ্যা হাতে গোনা। যেসব দেশে এই বিধান ছিলো তারাও সরে আসছে।
ইরানে ২০০১ সালের পর আর শিরশ্ছেদে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সৌদি আরবে শিরশ্ছেদের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত দু’দশকে এই মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠগুলোকে নানা অভিযোগে তলোয়ারের ঘায়ে উড়িয়ে দিচ্ছে সৌদি আরব।
২০১৪ সালে তথাকথিত ‘খিলাফতের’ ডাক দিয়ে বিরোধী মাথাগুলো এভাবেই তলোয়ারের কোপে আলাদা করা শুরু করেছিলো ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গিরা। তাদের দাবি শরিয়া আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবেই ‘ইসলাম বিরোধীদের’ শিরশ্ছেদ করছে তারা।
শুধু তারাই নয় এর আগে ১৯৯৬ সালে অপহরণ করা এক রুশ সৈনিক ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে চেচেন জঙ্গিরা তার শিরশ্ছেদ করে।
২০০২ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদক ড্যানিয়েল পার্লের শিরশ্ছেদ করে পাকিস্তানি জঙ্গিরা। বর্বর এই পদ্ধতি বিশ্বসম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত হুয়ান মেনদেজ ২০১৪ সালে সৌদি আরবের শিরশ্ছেদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এটা নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অত্যন্ত অবমাননাকর শাস্তি’।
জাতিসংঘ ছাড়াও সৌদি শিরশ্ছেদ প্রথা বন্ধে বারবার সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।