শান্তি, মানবতা ও মানুষের অধিকারের শ্বাশ্বত আহ্বানে বাংলা নতুন বছর ১৪২২কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। মানবতার জয়গান গেয়ে রমনা বটমূলে নববর্ষকে বরণ করেছে ছায়ানট। রমনা থেকে রাজধানী ঢাকা হয়ে পুরো দেশে বর্ষবরণের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশের মানুষ।
পূব আকাশে যখন নতুন বছরের প্রথম সূর্য ওঠার অপেক্ষা, তখন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে হাজারো মানুষের প্রতীক্ষা ছিলো রমনা বটমূলে। ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনে সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে আবাহন জানানো হয় বাংলা নতুন বছরকে।
২০০১ সালে রমনা বটমূলে জঙ্গি হামলার দীর্ঘ ১৪ বছর পর এবছরই প্রথমবারের মত ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ প্রিয় গানটি গেয়ে বরণ করে নেয় বাংলা নববর্ষ ১৪২২কে।
সকাল সাড়ে ৬টায় প্রার্থনা গীত গেয়ে শুরু হয় ছায়ানটে বৈশাখের মূল অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন। নববর্ষে তিনি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
নিজ সংস্কৃতির পরিচয় জানান দিয়ে ৪৭ বছর আগে নববর্ষ উদ্যাপনের মাধ্যমে আবহমান গ্রাম-বাংলার উৎসবটি হাজির হয়েছিল নাগরিক জীবনে। সে পথ ধরে এ উৎসব এখন বাঙালি সংস্কৃতির পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। পরিণত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
বৈশাখী সাজে ফুটফটে শিশুদের কেউ এসেছিল বাবা-মায়ের হাত ধরে; কেউ বা কোলে চড়ে। নারী-পুরুষের হাতে, গালের আল্পনায় ছিল চিরায়ত বাংলার আমেজ। বাংলার এই উৎসবের প্রথম লগ্নে বাঙালি সাজে বিদেশীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মত।
বটতলায় বিছানো চটের গালিচায় বসে শহুরে মানুষ আজ যেন গান-কবিতা শুনতে শুনতে ফিরে গিয়েছিলেন মাটির টানে-শেকড়ের সন্ধানে।
যানচলাচল নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড থাকায় সবাইকে বেশ খানিকটা পথ হেটে আসতে হলেও তাদের মুখে ছিল হাসি। বটমূলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আর্চওয়ে,র্যাবের ওয়াচটাওয়ার ছাড়াও মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন টু-হুইলার যানে পুলিশ সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।
বরাবরের মতো এবারও শান্তি ও মানবতাকে ধারণ করা গানের সুর ও বাণীতে দেশজ চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আবাহনে বরণ করা হয় নতুন বছরকে। ছায়ানটের একশ’ ত্রিশ জন শিল্পীর একক, দ্বৈত ও সমবেত গান আর কথায় ফুটে উঠে বাংলা আর বাঙালির অন্তর কথা। বিভিন্ন দেশাত্মকবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তিসহ মোট ২৮ টি পরিবেশনা ছিল অনুষ্ঠানে।
সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় সংগীত গেয়ে সমাপ্তি হয় ছায়ানটের মুল আয়োজন।