তথ্য প্রযুক্তি আইনের আলোচিত ও বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ওই আইনে সরকারি দপ্তরে বেআইনিভাবে ঢুকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে গোপনে কিছু রেকর্ড করাকে গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সোমবার সাংবাদিকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বিষয়টি। অনেকে মনে করছেন এ ব্যবস্থার মাধ্যমে গলা টিপে হত্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার।
আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরো এলো কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে না সূচক মন্তব্য করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব।
অনেকে মনে করছেন এর ফলে দেশে দুর্নীতির চিত্র প্রকট আকার ধারণ করবে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ফরহাদ টিটো।
‘৩২ ধারা ৩২ দাঁতের হাসি’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন,
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ যতটা ভয়ংকর তারচেয়ে বেশি হাস্যকর । অনুসন্ধানী/অপরাধ সাংবাদিকতাকে গলা টিপে মেরে ফেলার ইচ্ছায় এটা যদি করা হয়ে থাকে তাহলে খুবই বাজে সিদ্ধান্ত সরকারের । যদিও এইসব আজগুবি আইন-টাইন করে ১৪ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার (বা দুইটাই এক সাথে) ভয় দেখিয়ে সাংবাদিকতার এই সাহসী ধারাকে বন্ধ করা এবং সাংবাদিকদের নাগালের বাইরে থেকে আরাম-আয়েশে দুই নাম্বারি কাজ করে যাওয়ার প্র্যাকটিস করা সম্ভব না। অন্তত বাংলাদেশের মতো ঘুষ প্রধান দেশে তো নয়ই। কোনো সাংবাদিক বা মিডিয়া টিম তো গেইটকিপার/সিকিউরিটিকে ঘুষ দিয়েও ঢুকে যেতে পারে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে এবং সেরে আসতে পারে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট!
আর হাস্যকর আরেকটা কারনে, আইনে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা কোনো শিক্ষিত লোকের লেখা বলে মনে হয়না। সত্যি কথা কি, এই শব্দচয়ন/শব্দবিন্যাস অনেকটাই রহিম-করিম বা যদু-মদু টাইপ হয়ে গেছে।
আইনে লেখা হয়েছে ‘সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বেআইনীভাবে প্রবেশ করে তথ্য উপাত্ত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ’
প্রথম প্রশ্ন/হাসি : ‘বেআইনীভাবে প্রবেশ করে’ মানে কি ?
যদি বেআইনীভাবে কেউ প্রবেশ করে ফেলে কোনো প্রতিষ্ঠানে তাহলে সে তো আর সাংবাদিকই থাকলো না! সে তো হয়ে গেল আইন ভঙ্গকারী নাগরিক বা অপরাধী! আইন ভঙ্গ করে ঢোকার পর যদি কতৃপক্ষের অনুমতি বা সমর্থনক্রমেই কোনো কিছু রেকর্ড করেন একজন সাংবাদিক তাহলে ব্যাপারটা আইনসম্মত হয়ে গেল?
দ্বিতীয় প্রশ্ন/হাসি : ‘গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ’ কথাটার মানে কতটা বুঝে লিখেছেন ৩২ ধারার লেখকরা?
গুপ্তচরবৃত্তিতো একটা বিশ্ব স্বীকৃত পেশা। অপরাধ তো না। এই কাজ অপরাধ তখনই যখন এক দেশের স্পাই বা সিক্রেট এজেন্ট হয়ে অন্য দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জাল ফাঁকি দিয়ে কাজটা করবে কেউ। কিন্তু নিজের দেশের কোনো বৈধ পেশাদার নাগরিক/সাংবাদিক যখন লুকিয়ে কোনো অপরাধের(যেমন: ঘুষ আদান-প্রদান) ভিডিও বা অডিও ধারণ করবেন তা কোন দেশের বাংলায় ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ হবে ??