পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় সারা বিশ্বের ২০ লাখ মুসলিম সমবেত হয়েছেন পবিত্র আরাফাত ময়দানে। ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনির মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ রব্বুল আল আমিনের দরবারে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লি।
এই ২০ লাখ হাজি ফজর নামাজ আদায় করে লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে মিনা থেকে আরাফাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ট্রেন, বাস এমনকি ভিড় এড়াতে অনেক হাজি মধ্যরাত থেকে পায়ে হেঁটে মিনা ত্যাগ করেন।
আরবি ‘আরাফাত’ শব্দের অর্থ পরিচিতি। এই পবিত্র আরাফাত ময়দানেই প্রথম মানব আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইসিস সালামের প্রথম সাক্ষাৎ হয়।
ইহলোকের সব চাওয়া পাওয়া ভুলে পাপ মুক্তির আকুল প্রার্থনা নিয়ে মুমিন মুসলমানরা এখন আরাফাতের ময়দানে।
আরাফাতের জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বিদায় হজে ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। সেই বিশ্বাস নিয়েই প্রতি বছর আরাফাতে হাজির হন লাখো মুসল্লি।
রোববার সন্ধ্যায় আরাফাতে মাঝারি বৃষ্টির সাথে ধুলিঝড় হয়েছে। আজও আরাফাতে প্রচণ্ড গরম। দেশটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সন্ধ্যা নাগাদ আবার ধুলিঝড়সহ বৃষ্টি হতে পারে।
সৌদি ও বাংলাদেশ সরকারের হজ ব্যবস্থাপনায় সস্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি হাজিরা। তবে একটানা হাঁটা আর প্রচণ্ড গরমে অনেক হাজি অসুস্থ আর ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখতে বিস্তীর্ণ এই মাঠে ঠাণ্ডা পানি ছিটানো হচ্ছে। নিমের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
আরাফাত ময়দানে বাংলাদেশর সকল হাজি সুষ্ঠুভাবে পৌঁছেন বলে জানিয়েছেন আরাফাতে অবস্থানরত ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমান। এছাড়া রোববার মিনা তাবুতে মোহাম্মদ কোবাদ আলী নামে আরও একজন বাংলাদেশি হাজি ইন্তেকাল করেন। এই নিয়ে হজ পালন করতে এসে অসুস্থ ও বার্ধক্যজনিত কারণে ৫২ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন।
পবিত্র এই আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিয়েছেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ড. হোসাইন বিন আব্দুল আজিজ আল-শাইখ। খুতবায় মূলত মানুষকে আল্লাহ-ভীরু হতে বলা হয়েছে। কারণ তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। এই ইহজগতের সবকিছু তাঁরই দান।
দিক নির্দেশনামূলক খুতবা শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে করা হয় মোনাজাত। এর পর জোহর ও আসরের মাঝামাঝি সময়ে আরাফাত ময়দানেই এক সঙ্গে সব হাজি আদায় করবেন কসরের নামাজ। সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পবিত্র এই ময়দানেই চলবে হাজিদের ইবাদত-বন্দেগি। হজের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হাজিরা রওনা হবেন পরবর্তী গন্তব্য মুজদালিফার দিকে।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশে পাশের এলাকায়।