এমন একটি সময়ে বাংলাদেশে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন হচ্ছে যখন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞের ক্ষত জ্বলজ্বল করছে। দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিনে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন: ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি এমন সহিংসতায় মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যজোট ওআইসি চুপ থাকতে পারে না।’
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সুরে প্রায় একই কথা বলেছেন বিশেষ অতিথি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তিনি বলেন: ‘রোহিঙ্গা নিধন হচ্ছে জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য দলিল। এই নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ীদের নাম বিশ্বকে জানতে হবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কানাডা কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ফ্রিল্যান্ড নিজে তিন সন্তানের মা জানিয়ে সম্মেলনে বলেন: ‘রোহিঙ্গা শিশুদের দুর্দশা, আর নারীদের ধর্ষণের শিকার হতে দেখে আমিও কান্না সামলাতে পারিনি। আমি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে গিয়েছি। এখনো প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা আসছে। এর মানে হচ্ছে এখনো তাদের ওপর সহিংসতা চলছে। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা আদায় করতে হবে এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে সক্রিয় হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আমরা এক সহমত পোষণ করছি। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে এমন মানবিক বিপর্যয়ে ওআইসি কোনোভাবেই চুপ থেকে নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। তবে এই সংকটের শুরু থেকে সমস্যা সমাধানে তাদের ভূমিকা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আন্তর্জাতিক জোট হিসেবে তাদের কাছে এটা আমরা কখনোই প্রত্যাশা করি না।
অবশ্য রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শক্ত ভূমিকা রাখার সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ওআইসি আন্তর্জাতিকভাবে এখনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তাদের বাধ্য করতে ওআইসি বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ, এই সংকট কোনোভাবেই বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশ শুধু মানবিকতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। ওআইসি’র সকল সদস্য এবং পর্যবেক্ষক দেশ বাংলাদেশের মতোই মানবিক বলেই আমরা মনে করি। তাই সংকট সমাধানে তারা অতীতের মতো ভুল না করে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।