প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, “রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল।” নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী উচ্চারণ পুরো বাংলাদেশের মানুষের মনের কথা।
মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে লাখো রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার চার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেসামাল অবস্থা ও বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে আছে। চলতি বছরের শুরুতে চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখা গেলেও ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তা থমকে যায়।
নিয়ম রক্ষার আলোচনার মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকা আর তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে বিরোধের মধ্যে ঝুলে আছে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চাপ দিচ্ছে তাদের স্থায়ীভাবে রেখে দেয়া নয়তো তাদের কর্মের সুযোগ করে দিতে। সবমিলিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় এইসব রোহিঙ্গাদের জীবন।
রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে কী হবে, এটি নিয়ে নানা ধরণের সূত্র মেলানোর চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক মহল। মাঝে মাঝে তাদের একেবারে বাংলাদেশে রেখে দেবার মতো নানা প্রস্তাবও দিতে শুরু করেছে তারা। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা যেসব জায়গায় অবস্থান করছে, সেসব জায়গা একসময় ছিল গহীন বন ও হাতিসহ নানা পশুর অভয়ারণ্য। পরিবশে ধ্বংস করে সেইসব জায়গা এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে। বনভিত্তিক জীবন-জীবিকা হারিয়ে স্থানীয় বহু জনগণ কর্মহীন ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাদক, খুন-রাহাজানি ও নানা অপরাধের কেন্দ্র হয়ে উঠছে একসময়ের শান্তিপূর্ণ ওইসব এলাকা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ একটি উভয়মুখী চাপে আছে।
এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নানাভাবে চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গা বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে। ফলও আসতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের ওপর যে চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্ব তৈরি হয়েছে, তা স্বীকার করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংকট মোকাবিলা ও সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিক আচরণ করেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন দেশকে আহ্বান জানিয়েছে রোহিঙ্গা সঙ্কটে একসাথে কাজ করার। সেইসঙ্গে বাইডেন প্রশাসন রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।
আমাদের আশাবাদ, যথাযথ কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে তাদের দেশ মিয়ানমারে।