চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বনেতাদের সফল হতেই হবে

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেখানকার সেনাবাহিনীর নতুন করে চালানো জাতিগত নিধন ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বার্ষিকী পূর্ণ হলো। গত এক বছরে রাখাইনে বর্তমান শতাব্দীর অন্যতম বর্বর মানবতাবিরোধী অপরাধ দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু এই মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ এবং নিজ ভূমিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যবাসনে বিশ্বনেতারা সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়েছেন, তা বলা যেতেই পারে।

বিশ্বনেতারা ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশের অসহায় মানুষগুলোর এই দুর্দিনে চুপ করে বসে থাকেনি। নিজেদের যাবতীয় সমস্যা উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন হিসাব মতে, বাংলাদেশে এখন দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ে রয়েছে।

তবে আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশ এই ইস্যুতে যতই মানবিক ভূমিকা রেখেছে, ঠিক ততোটাই অমানবিক ও অযৌক্তিক আচরণ করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য বিপদের সম্মুখীন এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, এই আশ্রয় স্বাভাবিকভাবেই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু যতোবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা এসেছে, ঠিক ততোবারই মিয়ানমারের ভাওতাবাজি এবং অসহযোগিতা ছিল লক্ষ্যণীয়। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

মিয়ানমারের এই অসহযোগিতার বিপরীতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা তেমন একটা দেখা যায়নি। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশ কিছু দেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে মিয়ানমারের এই ভূমিকার নিন্দা জানানো হলেও সংকট মোকাবেলায় তারা তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ভারতের ভুমিকাও যথেষ্ট পক্ষপাত দুষ্ট। সবার নজর ও সহায়তার কথা কমবেশি ছিল বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র-বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা বিষয়ে। কেউই জোরালোভাবে মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে না রোহিঙ্গা জনগোষ্টির প্রত্যাবাসনে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের সৃষ্টি নয়। এই সংকট মিয়ানমারের, তাই মিয়ানমারকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর তারা যেহেতু এই সমস্যার সমাধান না করে উল্টো এখনও পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ করে যাচ্ছে, তাই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করার দায়িত্ব বিশ্বনেতাদের। বিশ্বনেতারা যাতে করে তাদের দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ও সক্ষম হন, সেজন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে বলে আমরা মনে করি। বিশ্বনেতাদের কার্যকর ভূমিকাই পারে রোহিঙ্গা নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে।