মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলো একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সরকার। সেসব জায়গায় তৈরি হয়েছে পুলিশের ব্যারাক, সরকারি ভবন এবং শরণার্থী পুনর্বাসন শিবিরসহ নানারকম সরকারি স্থাপনা।
অধিকাংশ গ্রামের বর্তমান রূপ দেখে বোঝার উপায় নেই আগে সেগুলোতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বসতি ছিল।
সম্প্রতি মিয়ানমারে একটি সরকারি সফরে গিয়ে এর প্রমাণ পেয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র একটি দল।
সফরের অংশ হিসেবে বিবিসি’র সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি এলাকায় সংবাদকর্মীরা অনেকগুলো নবনির্মিত সুরক্ষিত স্থাপনা দেখতে পান। স্যাটেলাইটের ছবি ও তথ্য অনুসারে ওই এলাকাগুলোতে আগে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছিল।
সফরে সরকারি গাড়িবহরে করেই সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধি জনাথান হেড। পুলিশের উপস্থিতি ছাড়া ভিডিও ধারণ বা কারো সাথে কথা বলার অনুমতিও ছিল না বলে জানান তিনি।
‘কিন্তু কথা বলতে না পারলেও আমরা রোহিঙ্গা মিউনিটিগুলোকে উদ্দেশ্যমূলক ও ইচ্ছাকৃত নির্মূলের স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পেয়েছি,’ বলেন হেড।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া মিয়ানমারের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর অন্তত ৪০ শতাংশই পুরোপুরি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। সেগুলোতে নতুন সরকারি স্থাপনা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে।
অবশ্য রোহিঙ্গাদের গ্রামের ধ্বংসাবশেষ সাফ করে সেখানে সরকারি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০১৭ সালের আগস্টে বর্মি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ সেনাবাহিনীর এই নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’র স্বীকৃতি দিয়ে একে ‘পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ করার মতো জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে অনেক আগেই।
মিয়ানমার সরকার অবশ্য এখনো নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধনের এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। দফায় দফায় আলোচনা, বৈঠক এবং সবদিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে বাংলাদেশ থেকে অল্প কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে রাজি হয় তারা।
কিন্তু মিয়ানমারের অনুমতি পাওয়া ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে গত মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কারণ হিসেবে রোহিঙ্গারা জানায়, ২০১৭ সালের নির্যাতনের ঘটনায় জবাবদিহিতার অভাবের ফলে তারা দেশে ফিরে চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা এবং মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আদৌ পাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চিত।
রোহিঙ্গাদের এই দেশে ফেরার অনীহার জন্য উল্টো আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশকেই দোষারোপ করে মিয়ানমার। সরকারের দাবি, তারা বিপুল সংখ্যক লোক ফেরত নিতে রাজি ছিল।
আর এই দাবি প্রমাণের চেষ্টার অংশ হিসেবে বিবিসিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের সরকারি সফরে আমন্ত্রণ জানায় মিয়ানমার।