উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচারণের দায়ে রূপালী ব্যাংকের ৩ সিবিএ নেতাকে বহিষ্কারসহ ৮ জনকে চূড়ান্ত শাস্তি দিয়েছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বুধবার জড়িতদের বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
চাকরি থেকে বরখাস্তকৃতরা হলেন, সিবিএ সভাপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, সেক্রেটারি মোঃ কাবিল হোসেন কাজী ও কাপ্তান বাজার শাখার অফিস সহকারি আনোয়ার মোল্লা। আর ড্রাইভার মো. আবুল কালাম আজাদকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া বাকি চারজনকে ডিমোশন দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অফিস সহকারি ছাব্বির আহমেদ ভুঁইয়া ও মনিরুল ইসলাম ও এ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (গ্রেড-১) মো. আহসান হাবিবকে ঢাকার আশপাশে বদলি করা হবে। আর অফিস সহকারি মো. আনোয়ার হোসেনকে দুর্গম এলাকায় বদলি করা হতে পারে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সকালে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক মো. নূরুজ্জামান, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শওকত আলী খান, সহকারী মহাব্যবস্থপক মো. সাখাওয়াত হোসেন ও প্রিন্সিপাল অফিসার মো. জসিম উদ্দিন সরকারের সঙ্গে অসদাচরণ ও অশালীন আচরণ করার অভিযোগ তোলা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন ৫ জনকে (সংস্থাপন ও কল্যান বিভাগের অফিস সহকারী কাবিল হোসেন কাজী, একই বিভাগের আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আনোয়ার হোসেন ও অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার গ্রেড-১ মো. আহসন হাবিব এবং অফিস সহকারী মো. আরমান মোল্লা) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আর সিবিএ সভাপতি মতিঝিল কর্পোরেট শাখার জুনিয়র অফিসার খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, ভিজিলেন্স ও ইন্টিলিজেন্স বিভাগের অফিস সহকারী মো. মনিরুল ইসলাম ও শিল্প ঋণ বিভাগের অফিস সহকারী মো. ছাব্বির আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুলাই অভিযুক্তদের চাকরি থেকে কেন বরখাস্ত করা যাবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ১৯ জুলাইর মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হলেও ১৬ জুলাই তারা নোটিশের জবাব দিয়ে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ কারণে অভিযুক্তদের নোটিশের জবাব বিবেচনা না করেই বুধবার তাদের বরখাস্ত করা হয়। তবে তাদের এখনও অফিসিয়ালি চিঠি দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএ সভাপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সন্ধ্যা ৬টার পর বের হয়ে আসলে বিভিন্ন মানুষ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চেয়েছে। কিন্তু আমি এর কিছুই জানি না। তবে যদি কর্তৃপক্ষ এই ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে শ্রম আইন উপেক্ষা করেই নেয়া হয়েছে। আর এমনটা হয়ে থাকলে তা হবে ব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাংকের সাথে যুক্ত আছি। বহু অনিয়ম দেখেছি, কিন্তু বিচার হয়নি। তবে সেদিন অনাকাঙ্খিতন ঘটে গেছে। এই জন্য এমডিকে বার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। তিনি এর কোনো সুরাহা করেননি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতি করি। তাই একটা চক্র সুকৌশলে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ বিষ্ণুপদ চৌধুরী চ্যানেল আই অলাইনকে বলেন, কয়েকদিন ধরে আমি চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত। তাই এ বিষয়ে কিছু জানি না।
উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মজিদ শেখ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংকের শৃংখলা বিভাগ ভাল বলতে পারবে। আমি এর কিছুই জানি না।
তবে এমন শাস্তির ঘটনায় আর্থিক খাতে শৃংখলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্ঠরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে সিবিএ নেতাকর্মীদের ১৪ বছরের অনাচারের লাগাম টেনেছে রূপালী ব্যাংক।
২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিবিএর শাস্তির পর রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের সিবিএর শাস্তির ঘটনা এটাই প্রথম। সে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০জনকে চাকুরিচ্যুত করেছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ।