চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাত হলেই রাজধানীর নির্জন সড়কে তারা হয়ে উঠতো ভয়ঙ্কর

দিনে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই ১০-১২ জনের একটি চক্র একত্রিত হতো রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায়। তাদের সবার বয়স ১৯ থেকে ২৫ এর মধ্যে, রাতের অন্ধকারে দিয়াবাড়ি হয়ে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে তারা চালাতো ভয়ানক কর্মকাণ্ড।  

পেছন থেকে ইট বা পাথর ছুড়ে চালককে গাড়ি থামাতে বাধ্য করতেন, কখনোবা গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারতেন ফলে চালক কিছুই দেখতে পেতেন না। আবার কখনো সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে বলে গাড়ির গতি কমিয়ে গাড়ি থামালে অস্ত্রসহ ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিংবা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতো মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিত ওই দলের সদস্যরা।

রোববার রাতে র‌্যাব-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-২) সহকারী পুুলিশ সুপার (এএসপি) সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল দিয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে আটক করেন।

আটককৃতরা হল- আসলাম আলম স্বাধীন (২৫), আশরাফুল ইসলাম সনি ওরফে বিশু (২৬), রবিন (২৫), শামীম ইসলাম (২২), নাজমুল হাসান (২১), নিজাম উদ্দিন অপু (২৫), মিজানুর রহমান (২৩), তাইমুল ইসলাম (১৯) ও মামুন (১৯)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, ২ টি চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

সোমবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন: তারা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের যোগসাজসে দিয়াবাড়ি এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিল। ওই এলাকায় ঘুরতে আসা লোকজনকে সন্ধ্যার পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নিতো। এছাড়া, ওই রোডে চলাচলরত প্রাইভেট কারকে টার্গেট করতো চক্রটি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যরা ওৎ পেতে থাকতো এবং কোন প্রাইভেট গাড়ি দেখলেই তার গতিরোধ করে রাস্তার কাজ চলছে বা ভাঙা বলে নির্জন রোডে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতো। সেই সড়কে আগে থেকেই ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা প্রস্তুত থাকতো।

গাড়ি থামানোর আরো অভিনব পদ্ধতি সর্ম্পকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বলেন, তারা চলন্ত গাড়ি থামানোর জন্য রশি ও রোড ব্লকার ব্যবহার করতো। কোনো কোনো গাড়ির পেছন থেকে পাথর বা ইট ছুড়ে চালককে গাড়ি থামাতে বাধ্য করতো। কখনোবা গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারতো। এর ফলে চালক কিছুই দেখতে না পেয়ে চালক গাড়ি থামাতে বাধ্য হতেন। আর সেই সুযোগে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কখনোবা শারিরীকভাবে নির্যাতন করে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেতো চক্রটি।

আটক স্বাধীন এই চক্রের মূলহোতা উল্লেখ করে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আরো বলেন, সে মূলত একজন ইয়াবাসেবী এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী। গত জুন মাসে ইয়াবাসহ সে গ্রেপ্তার হয়েছিল এরপর আবার ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জামিনে বের হয়ে সে আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি গড়ে তোলে। যার সদস্যরা দিনের বেলা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর দিয়াবাড়ি এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিলো।

চক্রের সদস্যরা এ কাজে প্রত্যেকে আলাদা মোবাইল ব্যবহার করতো। নির্ধারিত টার্গেট অনুযায়ী প্রত্যেকের মধ্যে ভয়েজ মেসেজ চালাচালি করে একত্রিত হতো বলেও জানান তিনি।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন: দিয়াবাড়ি এলাকায় আরো দুটি ডাকাতদল সক্রিয় রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদেরকে গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাপ্পী মুন্সি নামের এক ভিকটিম জানান, গত ১ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোড হয়ে সাইকেলসহ যাচ্ছিলেন তিনি। পথে তার সাইকেল থামিয়ে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে কাছে থাকা নিজ কোম্পানির এক লাখ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। আটকদের মধ্যে মামুন প্রথমে তার সাইকেলের গতি রোধ করে বলে চিহ্নিত করেন বাপ্পী।