চট্টগ্রাম থেকে: সোমবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ টেস্ট দল। স্কোয়াড ১৬ সদস্যের। কিন্তু চোখ-ক্যামেরা যেন খুঁজে ফিরছিল কেবল একজনকেই! তিনি আব্দুর রাজ্জাক। ড্রেসিংরুমে কিটব্যাগ রেখে যখন সিঁড়ি বেয়ে মাঠে ঢুকতে গেলেন, দৃশ্য ধারণে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল ফটো-সাংবাদিকদের মাঝে! পরে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের অভিনন্দনে সিক্ত হয়ে রাজ্জাক নিজেই বললেন, মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়ার কথা। একগাল হাসি মেখে বললেন- চলুন, অনুশীলনের আগেই কাজটা সেরে নেই।
রাজ্জাককে নিয়ে এমন আগ্রহের কারণ হঠাত টেস্ট দলে ডাক পাওয়া। এক সাকিব আল হাসানের দুই বদলি নেয়ার পরও ডাক পড়েছে এই বাঁহাতি স্পিনারের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে তার ঢুকে পড়া বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে সকলের মাঝে, এমনকি রাজ্জাকও অবাক। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে অবশ্য অবাক হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু বয়স ৩৫ পেরিয়ে আসা ক্রিকেটারকে চার বছরের বিরতির পর জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা উপমহাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে বিরলই। সেটি ছুঁয়ে গেছে রাজ্জাককেও। রোববার তার সঙ্গে যা ঘটে গেছে সেটি তাই বর্ণনা করলেন সানন্দেই।
‘আসলেই খুব অবাক হয়েছি। চিন্তাও করিনি, মাথায় ছিলই না। যখন জানতে পারলাম, বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে, ঠিক আছে কিনা সবকিছু। আকরাম ভাইয়ের (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান) সাথে কথা হয়েছিল, স্পষ্ট কিছু না। সজীব ফোন করেছিল (লজিস্টিক ম্যানেজার, বিসিবি)। আমার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার টিকিট নিশ্চিত করে ফোন করেছে। তারপর নান্নু ভাইয়ের (মিনহাজুল আবেদিন, প্রধান নির্বাচক) ফোন পেয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি। অনেক সময় আশা থাকে, কখনও অন্যরকমও হয়ে যায়।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কিছুদিন আগেই দেশের প্রথম বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট শিকারের মাইলফলকে নাম লিখিয়েছেন রাজ্জাক। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানাতে ডাকা হয়েছিল মিরপুরে। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান মাশরাফী-সাকিবরা। জাতীয় দলের আশেপাশে এসে হয়ত মনের কোণে স্বপ্নটা উঁকি দিয়েছিল বেশি করেই। আবারও টাইগার জার্সিটা…! তখন কে জানত টেস্ট সিরিজেই দলে ফেরা হবে। টেস্ট অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ স্পিনার সাকিবের ইনজুরি দলের রাস্তা খুলে দিয়েছে আরেক অভিজ্ঞের জন্য।
২০১৪ সালে সবশেষ টেস্ট খেলা রাজ্জাক অভিমান করে বলতেই পারেন, তাহলে এতদিন কেন ডাকা হয়নি। এই চার বছরে যে সাকিবের একজন বিকল্পও তৈরি করা যায়নি সেটি তো প্রমাণ করে তার এই অন্তর্ভুক্তিই। বাঁহাতি স্পিনার অবশ্য প্রসঙ্গটি এড়িয়েই গেলেন, ‘আগে-পরে নিয়ে আর ভাবতে চাই না। ভাগ্য যখন আপনাকে ডেকে নিয়ে আসবে, ঠিক তখনই ডাক পাবেন। এটা আগে-পরে বলে কথা না।’
রাজ্জাক বরং চান ফেরার ব্যাপারটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়েই থাকুক দেশের ক্রিকেটে, ‘আসলে আমার কাছে মনে হয় এটা এখন সবার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা উচিত। কখনোই শেষ না। অনেক সময় তরুণ ক্রিকেটারদের ভাবনায় থাকে আর হবে না, কিংবা হচ্ছে না বা এরকম কিছু। আমার মনে হয় কারো এরকম ভাবা উচিত নয়। ভাল খেলতে থাকলে একটা না একটা সময় দলের প্রয়োজন হবেই। সুযোগের অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষাটা কত দিনের সেটা চিন্তা করা কঠিন। আমার জন্য ৯৫ শতাংশ মানুষই হয়ত ধরে নিয়েছিল ওকে দিয়ে হবে না। কিন্তু আমার ভিতরে একটা জিনিস কাজ করতো, আমি খেলব।’
সাগরিকার এই ভেন্যুতেই সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন রাজ্জাক। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কাই। চার বছর পর আবার সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বুধবার হতে পারে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ। সেটি নিয়ে কী ভাবছেন ১৫৩ ওয়ানডে ও ১২টি টেস্ট খেলা রাজ্জাক?
‘স্বাভাবিকভাবে আমার পরিকল্পনা যেভাবে সাজাই, এখানেও সেভাবেই চলবে। আলাদা কিছু করার ইচ্ছে নেই। আমার যেটা রোল হবে, সেটা যেন ভালভাবে করতে পারি। সেটাই চাইবো। আমার যেটা ফ্রন্ট পয়েন্ট আছে, সেটা ভালভাবে করতে চাইবো।’