রাঙামাটি থেকে:পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটিতে সেনানিবাসের ঈদ জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেতার, টেলিভিশন কেন্দ্রসহ আশেপাশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে কয়েকজন এই বড় জামাতে অংশ নেন।
নামাজ শেষে পাহাড় ধসে নিহতদের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেকেই কাছের মসজিদের জামাত শুরুর সময় জানতে না পেরে, নামাজ পড়তে পারেননি। আবার কয়েকজন পরিবারের জন্য সকালের খাবার সংগ্রহ করার ব্যস্ততার কারণে যেতে পারেননি ঈদগাহে।
যারা গিয়েছেন তারাও এবার প্রতিবারের মতো ফিরনি-সেমাই খেয়ে ঈদগাহতে যেতে পারেননি। গোসল করে মিষ্টিমুখ না করেই নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন সুমন। ফিরে এসে পেয়েছেন সেনাবাহিনীর দেয়া সেমাই।
নামাজ থেকে ফিরে দুই ছেলেকে নিয়ে সেমাই খেয়েছেন সুমন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে সুমন বলেন,’এবার এরকম ঈদ করতে হবে কে ভাবতে পেরেছিল। রান্না করতে পারেনি আমার স্ত্রী। মিষ্টি না খেয়ে ঈদের নামাজ পড়লাম এই প্রথম। কিছুই করার নেই আমার। দুই ছেলেকে নানীর বাড়ি থেকে টুপি-পাঞ্জাবি দিয়েছে। ওদের খাইয়ে দিয়ে নিচে গিয়ে মোবাইলে ছবি তুলবো একটু পরে।’
টেলিভিশন কেন্দ্রের বারান্দায় বের হতেই দেখা কুচকে যাওয়া পাঞ্জাবি পড়া বেলাল মোল্লার সঙ্গে।
শিমুল তলীর ধসে সব হারানো বেলাল মোল্লা বলেন,’ আমার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি রেখে আসতে গিয়েছিলাম। সেসময় আশ্রয়কেন্দ্রে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি দেয়া হয়। তাই পাইনি। পুরোনো পাঞ্জাবিতেই নামাজ পড়েছি। তবে পায়জামাটা নতুন। ইমাম সাহেব দিয়েছেন।’
শিশু একাডেমির আশ্রয় নেয়া পুরুষরা বেশিরভাগই নামাজ পড়েছে উন্নয়ন বোর্ডের মসজিদে। জামাতের কিছুটা দেরি থাকলেও তাড়াতাড়ি গোসল করতে সকাল ৭ টাতেই সরব এই আশ্রয় কেন্দ্র।
এখানে গোসলের লাইনে দাঁড়ানো হেলাল বলেন,’ আগে গোসল করে মায়ের রান্না করা ফিরনি খেতাম। এবার এখানে মা নিজে রান্না করতে পারছে না। তাই নামাজ পড়ে আত্মীয় বাড়িতে যাবো। সেখানেই খেতে পারবো।’
হেলাল যখন কথাগুলো বলছিলেন পাশেই মুখে আঁচল চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন তার মা খালেদা বেগম।
হেলালের মা বলেন,’ গত ঈদেও সকালে সেমাই রান্না করেছিলাম। এখানে ঈদ করা যায়? আগামীকাল ভাঙা বাড়িতেই যাচ্ছি। ঝুঁকি থাক, তবুও নিজের বাড়িতো।’
চট্টগ্রামে রিকশা চালান ইউসুফ। পাহাড় ধসের খবর পেয়ে এসে দেখেন কিচ্ছু নেই। এখন পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজেছেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে। ঈদের জামাতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আজ তা পারেননি তিনি, কারণ সরবরাহ করা সেমাই, নাস্তা যোগাড়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাকে।
তিনি আরও জানান, এই আশ্রয়কেন্দ্রের কয়েকজন কাছের মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলো। তবে অনেকেই জামাত শুরুর সঠিক সময়টা না জানায় নামাজ না পড়েই ফিরেছে।
এই সহায়- সম্বল স্বজন হারা মানুষগুলোর দুর্দশা ভোলেনি রাঙামাটির সর্বসাধারণ। গ্যারিসন সংলগ্ন ঈদ জামাতের দুই পর্বে, রিজার্ভ বাজার বড় মসজিদ, উন্নয়ন বোর্ড মসজিদসহ শহরের সব মসজিদেই নিহতদের আত্মার শান্তি, গুনাহ মাফ এবং দুস্থদের কল্যাণ কামনায় হয়েছে বিশেষ মোনাজাত।
ঈদ উপলক্ষে আজ আশ্রয়কেন্দ্রে আসবেন রাঙামাটি সেনানিবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিপাটি করতে ব্যস্ত সেনা সদস্যরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে না পারায় অভ্যস্ত বলে জানালেন কর্পোরাল আকমল, হায়দারুলরা।
ভিডিওতে দেখুন রাঙামাটির ঈদের নামাজ: