চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রঙ জ্বলা বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামে…

পেছনে খাঁ খাঁ শূন্যতার আঁধারকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকা এক গ্রাম। চারদিকে অপার শুনশান নিরবতা। বাড়ির অদূরে নাম না জানা এক শাখা নদী মরি মরি করে বেঁচে আছেন। প্রচণ্ড গরমের সময় সেই নদী থেকে বাষ্প দীর্ঘশ্বাসের মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ওঠে।
পুরনো আমলের জরাজীর্ণ দোতলা বাড়ি।

মেঝে, সিঁড়ি এমনকি দোতলার সামনের দিকে বেয়ারা মেয়েছেলের মতো ঝুঁকে থাকা বারান্দা-সেও রেঙ্গুন থেকে আনা বার্মাটিক কাঠ দিয়ে তৈরি।

একদিন রঙ জ্বলা বিকেলের শেষে সন্ধ্যা নামার সময় আমি দোতলার বারান্দায় বসে বসে দূরে চষা জমি, শস্যাদির খেতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি সময় সুযোগ পেলে দিনমান এসব দেখি। দেখতে ভালোই লাগে এসব।

আমার বাড়ির আশেপাশে যারা জমিজমা ভোগদখল করছে তারা আমার দিনমান বসে বসে এসব দেখাকে মূল্যহীন মনে করে, তারা ভাবে এ লোকটা যে ক’টা বাঁচবে দেখুক না এসব ছাইভস্ম! এসব দেখলে জগত সংসারের কার কি এমন ক্ষতি!
কেন দেখি আমি এসব?

শহরের বড় ডাক্তার আমাকে বলেছেন, যতদিন বেঁচে রয়েছেন আশপাশের সবকিছুকে চা খাওয়ার মতো করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখবেন।
পাগলের ডাক্তার নাকি লোকটা!

তারপর থেকে আমি দিনের বেশিরভাগ সময় দোতলার এই কাঠের বারান্দায় বসে বসে এসব দেখি।
আজও আমি বিকেল থেকে বসে আছি।
সামনে সন্ধ্যা নামি-নামি করছে।
আমি যে খুব চা খাই তা নয় কিন্তু আজ কেন যেন হঠাৎ করে আমার খুব চা খেতে ইচ্ছে করে।

কিন্তু এই অবেলায় কে আমাকে চা করে খাওয়াবে!
কাজের লোক আছে একজন, সেও নিয়ম মানে না ঠিক। কোনোরকম তার দায়িত্ব পালন করে চলে যায়। মাস শেষে গুণে গুণে টাকা নিতে কসুর করে না। কথা বললে শোনে না। কানে কম শোনার ভান করে ঠিকমত শোনে না সে। রাজ্যের অবহেলা করে আমাকে, আমি কিছুই বলি না। শুধু ভাবি তার চৌদ্দ গুষ্টি এ বাড়ির খেয়েছে পরেছে- আর তুই শেষ বেলায় ভেল্কি দেখাচ্ছিস!
আমি কিছু বলি না।

ভেতরে ভেতরে আমার চা খাওয়ার ইচ্ছে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছে।
কে দেবে আমাকে এক কাপ চা?

আমি চেয়ারে বসে থেকে আমার অর্ধেক অবশ থাকা শরীর এলিয়ে দেই। আমার দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে। দুরের চষা জমি, ক্ষেত আর নদী থেকে উঠে আসা পবনেরা আমার শরীরে পরশ বুলিয়ে চলে যায় ঘরের ভেতরে।
আমার কেমন ঘুম ঘুম লাগে।
আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।

‘আপনার লাইগা সেই কখন থেকে চা করে বসে রয়েছি। আপনাকে ডেকে চলেছি- কই আপনি দেখি উঠলেন না!’
আমার ঘুম ভেঙে যায়।
দেখি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। তার সারা শরীরে নদীর মমতা, চষা জমির মসৃণতা-
‘কই আপনে বুঝি চা খাইবেন না!’
সামনে অন্ধকার নিয়ে আমি একা একা চা খাই…